বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ দুপুরে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক ছিল প্রধানমন্ত্রী। দেশের কোভিড পরিস্থিতির বিষয়ে। সেখানেই বাংলা-সহ বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলির উপর দায় চাপান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘুরিয়ে তিনি বলেন, নভেম্বর মাসে যখন কেন্দ্র সরকার পেট্রল এবং ডিজেলের এক্সাইজ ডিউটি কমিয়ে দিয়েছিল, সেসময় যে রাজ্যগুলি ভ্যাট কমায়নি, সেই রাজ্যগুলির সরকার, তাঁদের নাগরিকদের সঙ্গে অন্যায় করেছে। এবার প্রধানমন্ত্রীর সেই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জবাবে বলেন, ‘রাজ্যের বকেয়া ৯৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আমাকে ৫০ হাজার কোটি টাকা দিন। পরের দিন পেট্রোপণ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড় দিয়ে দেব। আপনার রাজ্য ৫ হাজার দিয়েছে, আমি ১০ হাজার কোটি দেব।’
বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পেট্রোপণ্যে রাজ্যের থেকেও ২৫ শতাংশ বেশি কর নেয় কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্র সরকার পেট্রোপণ্যে ৭৫ শতাংশ কর নেয় কেন্দ্র সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘তাহলে রাজ্য সরকার কীভাবে চলবে? কী করে চালাব?’
আজ সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে ডাকা বৈঠক ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। দেশের কোভিড পরিস্থিতির বিষয়ে। দেশে ফের নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণ চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ রোধে কেন্দ্র এবং রাজ্যের যৌথভাবে কী করা উচিত সেই বিষয়ে আজ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক ছিল। এই বৈঠকে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আচমকাই আলোচনার মধ্যে জ্বালানির প্রসঙ্গ তুলে আনেন। ঘুরিয়ে তিনি বললেন, নভেম্বর মাসে যখন কেন্দ্র সরকার পেট্রল এবং ডিজেলের এক্সাইজ ডিউটি কমিয়ে দিয়েছিল, সেসময় যে রাজ্যগুলি ভ্যাট কমায়নি, সেই রাজ্যগুলির সরকার, তাঁদের নাগরিকদের সঙ্গে অন্যায় করেছে। প্রধানমন্ত্রী সেই সঙ্গে এও অনুরোধ জানিয়েছেন যে, ৬ মাস আগে যেসব রাজ্য এটা করেনি, সেইসব রাজ্য যেন এখন পেট্রোল-ডিজেলের ভ্যাট কমায়।
প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্যের পরে, রাজ্য সরকারগুলি নিজেদের বক্তব্য জানানোর সুযোগ পাননি। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনীই বিষয়ে সরব হন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এদিন একতরফা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীদের বলতে দেওয়া হয়নি। আমার অনুরোধ ছিল করোনার বৈঠকে এইসব নিয়ে আলোচনা করবেন না। কিন্তু এটা ওদের এজেন্ডা। আমাদের বলতে দেওয়া হয়নি।’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘৩ বছর ধরে আমরাও পেট্রল-ডিজেলে ১ টাকা করে ছাড় দিয়েছি। দেড় হাজার কোটি টাকা চলে গিয়েছে। আমরা ৯৭ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পাই। সেটা আমাদের দিয়ে দিন, আমরা দেখুন পরের দিন ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড় দিয়ে দেব।’
পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিসংখ্যান তুলে দাবি করেছেন, ‘২০১৪ সালে কেন্দ্র সরকার ক্ষমতায় আসার পর পেট্রল-ডিজেলে ১৭ লক্ষ ৩১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা কর নিয়েছে মোদি সরকার। আজ আপনি রাজ্যের উপর দায় চাপাচ্ছেন? আপনি নিজে সাধারণ মানুষের পকেট কেটেছেন।এটা গণতন্ত্রে এক ধরনের তোলাবাজি। গণতন্ত্রকে বুলডোজ করবেন না।’ এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন যে, ‘আপনি কখনও কখনও বলেন রাজ্যের এত ঋণ। কত ঋণ আছে? আমরা বহু ঋণ শোধ করে দিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্র সরকার কত ঋণ নিয়েছে। রাজ্য সরকারের যদি ৩-৪ লক্ষ কোটি টাকা থেকে থাকে, তাহলে কেন্দ্র সরকারের ১৫০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ আছে। সেই ঋণ কী করে শোধ করবেন।’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্য দখল করতে না পেরে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে কেন্দ্র সরকার। তাঁর অভিযোগ, ‘নিজেরা এত টাকা রোজগার করবেন পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়িয়ে, কী এমন দাম কমিয়েছেন নভেম্বরে? সবটাই তো লোক দেখানো, কত সেস বসিয়েছেন? কৃষি সেস, রোড সেস, শিল্প সেস, সাজুগুজু সেস? সেই টাকা তো রাজ্য সরকার পায় না। আপনি সব টাকা তুলে নিয়ে চলে যাবেন, আমাদের টাকাও দেবেন না, আর ভোট এলেই আমাদের নামে দোষ দেবেন। আমাদের নামে দিয়ে দোষ, সাধু-সেজেছে নন্দ ঘোষ!’