কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের রহস্যমৃত্যুতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ
বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের অন্যতম সাক্ষী তথা প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে। নিজের বাড়িতেই তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সঙ্গে মেলে সুইসাইড নোটও। এবার সেই নিরঞ্জন বৈষ্ণবের রহস্যমৃত্যুর ঘটনাতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। নিরঞ্জন বৈষ্ণব তপন কান্দু খুনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তাই এই দুটি ঘটনা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এমনই মন্তব্য করেছেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার।
নিরঞ্জন বৈষ্ণবের মৃত্যুতে এফআইআর দায়ের হয়েছে। সেই সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে সুইসাইড নোটও। আবার প্রতিবেশীদের সাক্ষ্য নেওয়াও হয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের আসতে বলা হয়েছে। কিন্ত তাঁরা এখনও আসেননি। নিরঞ্জন বৈষ্ণব যে ছাত্রদের পড়াতেন, তাঁদের কাছ থেকে খাতা নিয়ে তাঁর হাতের লেখা সুইসাইড নোটের লেখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এমনটাই আদালতে জানিয়েছে রাজ্য। ১৩ মার্চ খুন হন ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। এরপর চলতি মাসে ৬ তারিখ ওই খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং সাক্ষী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তাঁর ঘর থেকে। নিরঞ্জন বৈষ্ণবের মৃত্যুতে ফের পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৩ মার্চ সকালে হাঁটতে বেরিয়ে খুন হন পুরুলিয়ার ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। সেই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বন্ধু নিরঞ্জন। সেই ঘটনার পর থেকেই, বারবার তদন্তের নামে নিরঞ্জন বৈষ্ণবকে থানায় ডেকে পাঠানো হত, এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিকভাবে চাপ দেওয়া হত বলেই অভিযোগ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হত। এর জেরে তিনি মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপর চলতি মাসে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সুইসাইড নোটে সেই মানসিক চাপের কথা উল্লেখ করা ছিল। পাশাপাশি স্থানীয়দের দাবি, মঙ্গলবার রাতে বন্ধুর বাড়িতে ছিলেন নিরঞ্জন বৈষ্ণব। বুধবার ভোরে বাড়ি ফেরেন। তারপর সকালে ঘর থেকে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। যে সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছিল, তাতে লেখা ছিল, ‘যে দিন থেকে তপনকে খুন করা হয়, সে দিন থেকে আমি মানসিক অবসাদে ভুগছি। যে দৃশ্যটি দেখেছি, তা মাথা থেকে কোনও রকমে বের হচ্ছে না। ফলে রাতে ঘুম হচ্ছে না...। তার উপর পুলিশের বারবার ডাক।’ এই সব কিছু মিলিয়েই যে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন, তা স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে ওই সুইসাইড নোটে। বলা হয়েছে, ‘আমি জীবনে থানার চৌকাঠ পার করিনি। এই আমি আর সহ্য করতে পারছি না। ... সে জন্যই এই পথ বেছে নিলাম।’
নিরঞ্জনের মৃত্যুর পর, পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধারে গেলে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। এই মৃত্যুর ঘটনাতেও সিবিআই তদন্তের দাবি জানান নিরঞ্জনের আত্মীয়-পরিজনেরা। তপনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন নিরঞ্জন। বয়স ৫০-৫২-র মধ্যে। সন্ধ্যায় প্রায়ই একসঙ্গে হাঁটতে বের হতেন। খুনের ঘটনার দিনও তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন। নিরঞ্জনের সামনেই তপনকে খুন করা হয়। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার বলেন, সিবিআই তপন কান্দু খুনের তদন্ত করছে, এই পরিস্থিতিতে নিরঞ্জনের খুনের তদন্তও সিবিআইয়ের হাতেই থাক।