বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ‘কালী’ ছবি নিয়ে মন্তব্যের জেরে দলের নিন্দার মুখে আগেই পড়েছিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এবার তাঁর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন বিজেপি বিধায়ক বিবেকানন্দ বাউরি। তিনি মন্তব্য করেছেন যে, মহুয়া মৈত্র যে মন্তব্য করেছেন, তা হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে ও তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে।
তাঁর আরও দাবি, ‘বাক স্বাধীনতার নামে হিন্দু ভাবাবেগকে আঘাত করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, পদ্ম শিবিরের একাধিক বিধায়ক মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ দায়ের করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। গতকালই মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যের সমালোচনা করে, তাঁর গ্রেফতারির দাবি তুলেছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মহুয়ার বিরুদ্ধে বঙ্গ বিজেপি এবার সরাসরি আইনি পথে যেতে চাইছে।
এদিকে, এইসব বিতর্কের মাঝেই ফের টুইট করেছেন মহুয়া মৈত্র। তিনি লিখেছেন, ‘জয় মা কালী! বাঙালি নির্ভীক ও তোষামদহীন দেবীর উপাসনা করে।’ তাঁর এই টুইট যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এদিকে, এই টুইটের কিছুক্ষণের মধ্যেই আরও একটি টুইট করেন মহুয়া মৈত্র। দ্বিতীয় টুইটে তিনি লেখেন, ‘Bring it on BJP! আমি মা কালীর ভক্ত। আমি কোনও কিছুকেই ভয় পাই না। তোমাদের অজ্ঞতাকেও নয়, তোমাদের দুষ্কৃতীদেরও নয়, তোমাদের পুলিশদেরও নয়। সবথেকে বড় বিষয় তোমাদের ট্রোলদেরও ভয় পায় না। সত্যের কোনও অবলম্বনের প্রয়োজন হয় না।’
সম্প্রতি ডকুমেন্ট্রি ফিল্মমেকার লীনা মানিমেকালাইয়ের ‘কালী’ সিনেমার ‘অবমাননাকর’ পোস্টার নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পোস্টারে মা কালীর বেশে এক মহিলাকে দেখা গিয়েছে। তার হাতে একটি সিগারেট। এই আবহে মঙ্গলবার এক সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে ‘কালী’ সিনেমার পোস্টার বিতর্ক নিয়ে মহুয়াকে প্রশ্ন করা হয়। সেই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি তথ্যচিত্রটির পরিচালক লীনা মণি মণিমেকলেইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপরই তাঁর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত।
কিন্তু দলের পক্ষ থেকে মহুয়ার মন্তব্যের কড়া নিন্দা করে, স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল যে, দল তাঁর মন্তব্যকে সমর্থন করে না। এরপরই টুইটারে তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল হ্যান্ডলকে আনফলো করেছেন মহুয়া। যদিও, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টুইটারে এখনও ফলো করছেন তিনি।
ঠিক কী বলেছিলেন মহুয়া মৈত্র? মঙ্গলবার সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া। সেখানেই ‘কালী’ তথ্যচিত্রর পোস্টার নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে তিনি বলেন, কালী তাঁর কাছে এমন একজন দেবী, যিনি মাংস খান, মদ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কালী এমন একজন দেবী যিনি মাংস ও মদ খান। আপনার স্বাধীনতা রয়েছে নিজের মতো করে আপনার ঈশ্বরীকে কল্পনা করার। সিকিমে গেলে দেখবেন কালীকে মানুষ হুইস্কি দিচ্ছেন। আবার উত্তরপ্রদেশে আপনি যদি ওই কাজ করতে যান তাহলে আপানার বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিরোধিতার অভিযোগ উঠবে।’ তিনি টুইটে তারাপীঠের উদাহরণ দেন। বলেন যে, তারাপীঠে মাকে ভোগ হিসেবে খাবারের সঙ্গে মদও দেওয়া হয়।
মহুয়ার এই মন্তব্যের পরই বিতর্ক দানা বাঁধে। এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর দল জানিয়ে দেয় যে, তারা মহুয়ার পাশে নেই। মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক টুইটবার্তায় বলা হয়, ‘ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ ইস্টে মহুয়া মৈত্র যে মতামত প্রকাশ করেছেন, তা সম্পূর্ণভাবে তাঁর ব্যক্তিগত মত। কোনওরকমভাবে সেই মন্তব্যকে সমর্থন করে না দল। এরকম মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস।’ এই আবহে আজ দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেসের টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘ফলো’ করছেন না সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এরপর বঙ্গ বিজেপি তাঁর গ্রেফতারির দাবি তুলতেই তিনি এই বিষয়ে ফের টুইট করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন।