বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ শেষপর্যন্ত আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হল। বাজল যুদ্ধের দামামা। বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা করলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন দখল করার পথেই হাঁটল রাশিয়া। এমনটাই খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে। রাশিয়ার এই পদক্ষেপের ফলে কার্যত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আর এই যুদ্ধের প্রভাব যে গোটা বিশ্ব পড়তে চলেছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
উল্লেখ্য, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই যুদ্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এবার তা বাস্তবেই ঘটল। এদিন সকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন যে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনে মিলিটারি অপারেশন করা হবে। যদিও ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রসংঘের পক্ষ থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তবে এতে যে রাশিয়া খুব একটা আমল দিচ্ছে না, তাও স্পষ্ট তাঁদের যুদ্ধের প্রস্তুতি দেখে।
সূত্রের খবর, ইউক্রেনের ডনবাসে ইতিমধ্যেই সেনা অভিযান শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া। ইতিমধ্যেই সেখানে মিসাইল হামলা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেনের সমস্ত বিমান পরিষেবাও বাতিল করা হয়েছে। ফলে সেখানে এখনও আটকে থাকা ২০ হাজার ভারতীয়র নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। এদিকে, বিপর্যস্ত হয়েছে মোবাইল পরিষেবাও। জানা গিয়েছে, কিয়েভ এবং খারকিভেও মিসাইল হামলা চলছে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
এদিন সকালেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিত্র পুতিন জানান যে, ইউক্রেনে মিলিটারি অপারেশিন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার পূর্ব অংশে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিকে দমন করতেই এই সিদ্ধান্ত বলেই তিনি জানিয়েছেন। রাশিয়ার স্থানীয় সময় ভোর ৬ টার আগেই তিনি ঘোষণা করে বলেন, ‘আমি মিলিটারি অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইউক্রেনের নাৎজি়দের দূর করার লক্ষ্যেই এই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি এও জানিয়েছেন যে, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে কোনোভাবেই যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব নয়। কাজেই ইউক্রেন বাহিনীর উচিত অস্ত্র ফেলে সীমান্ত থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়া। তিনি এও বলেছেন, ‘ইউক্রেনকে দখল করা রাশিয়ার লক্ষ্য নয়। বরং ডনবাসকে রক্ষা করতেই এই অভিযান চালানো হয়েছে।’ তিনি হুঁশিয়ারির সুরে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার এই অভিযানের বিরোধিতা যারা করবে, তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেবে রাশিয়া। মূলত ইউক্রেনের পূর্বে থাকা বিদ্রোহীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেই পুতিন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই সূত্রের খবর।
এদিকে, গতকালই ইউক্রেনের বিদ্রোহীরা রাশিয়ার কাছে সামরিক সাহায্য চেয়েছিল বলেই সূত্রের খবর। এই আবেদনের পরেই রাশিয়ার এই অভিযানের সিদ্ধান্ত। তবে, রাশিয়ার কাছে যুদ্ধ থেকে সরে আসার আবেদন জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট লেজেনস্কি। জানা গিয়েছে, তিনি একাধিকবার পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।
এদিকে, পুতিনের এই সিদ্ধান্তের পর হুঁশিয়ারি দিয়েছে আমেরিকাও। এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আক্রমণ করেছেন পুতিনকে। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এই হামলা অনুচিত। এর জন্য রাশিয়াকে বিশ্বের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাইডেন জানিয়েছেন, ‘যত প্রাণহানি ও সম্পত্তি ধ্বংস হবে তার জন্য রাশিয়া একা দায়ী থাকবে। আমেরিকা ও তার মিত্রশক্তি দেশগুলি মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এর জবাব দেবে। বিশ্ব রাশিয়ার থেকে জবাবদিহি চাইবে।’
সবদিকে নজর রাখছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমি হোয়াইট হাউস থেকেই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখব। আমার জাতীয় সুরক্ষা বাহিনীর থেকে নিয়মিত খোঁজও নেব। সকালেই আমি জি ৭ গোষ্ঠীভুক্ত বাকি দেশগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসছি। আমাদের ন্যাটো সহযোগীদের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করব আমরা।’