বয়স মাত্র ১৩ বছর। আর এই বয়সেই নিদারুণ ভাগ্যের পরিহাসে চরম যন্ত্রণায় কাটছিল এতগুলো দিন৷ বয়স যখন মাত্র ১০ মাস, তখনই এক দুর্ঘটনায় ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখে পড়ে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের মেয়ে আফসিন গুল। বোনের হাত থেকে পিছলে পড়ে গিয়েছিল সে। তখন থেকেই ৯০ ডিগ্রি বেঁকে গিয়েছিল ঘাড়।
কখনও স্কুলে যেতে পারেনি আফসিন। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাও হয়নি কোনওদিন। দুর্ঘটনার পরই আফসিনের বাবা-মা তার চিকিৎসার জন্য তড়িঘড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। তাকে পরীক্ষা করে ওষুধও দেন চিকিৎসক। কিন্তু তাতেও তার অবস্থার পরিবর্তন হয়নি৷ দিনে দিনে বেড়েছে ঘাড়ে ব্যথা৷ সেই কারণে রাতের পর রাত ঘুমোতে পর্যন্ত পারেনি আফসিন।
এর মধ্যেই আফসিন আক্রান্ত হন সেরিব্রাল পালসিতে। এই অবস্থায় মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়ে মা-বাবার কপালে৷ কীভাবে আফসিনের পরবর্তী চিকিৎসা হবে তা ভেবেই উঠতে পারেননি মা-বাবা৷ এমনকি চিকিৎসার জন্য আর বিশেষ অর্থ খরচ করতেও অক্ষম হয়ে পড়েন তাঁরা। ফলে বিগত বারোটা বছর ধরেই অসহ্য ঘাড়ের যন্ত্রণা সহ্য করে চলেছিল আফসিন।
এরপরই একসময় বদলে যায় আফসিনের জীবন। সিনেমার গল্পের মতো এক ধাক্কায় পালটে যার ছোট্ট মেয়েটির জীবন। গত মার্চ মাসে ভারতীয় চিকিৎসক রাজাগোপালন কৃষ্ণন আফসিনকে বিনামূল্যেই সম্পূর্ণ চিকিৎসা করার প্রস্তাব দেন। ভারতের এই চিকিৎসককে আফসিনের কথা জানান ব্রিটিশ সাংবাদিক আলেকজান্দ্রিয়া থমাস। এক প্রতিবেদনে আফসিনের শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরেছিলেন তিনি। আর এই সাংবাদিকই আফসিন ও তার পরিবারের সঙ্গে ডাঃ রাজাগোপালন কৃষ্ণনের যোগাযোগ করিয়ে দেন।
২০২১ সালের নভেম্বরে আফসিনের চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছিল তার পরিবার। এরপর, তার অস্ত্রোপচারের খরচ জোগার করতে, ডাঃ রাজাগোপালন কৃষ্ণনের উদ্যোগে অনলাইনে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালের এই চিকিৎসক সফলভাবে আফসিনের অস্ত্রোপচার করেন। আফসিনের ঘাড় ঠিকঠাক করতে প্রথমে চার-চারটি বড় অপারেশন করতে হয়। এরপর ফেব্রুয়ারিতে হয় মূল অস্ত্রোপচার।
ছঘণ্টার অপারেশন শেষে আফসিনের দাদা ইয়াকুব কুম্বার জানান, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। অন্যদিকে, বিবিসি নিউজ-এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ডাঃ রাজাগোপালন কৃষ্ণান বলেছেন, এই ধরণের অপারেশন গোটা বিশ্বে সম্ভবত এই প্রথম! আফসিনের অস্ত্রোপচার সফল হওয়ার পরই চিকিৎসক সাংবাদিকদের বলে দেন, অস্ত্রোপচার সফল হলেও সঠিক চিকিৎসা ছাড়া আফসিন বেশিদিন বাঁচতে পারবে না। তবে অপারেশনের পর আফসিনের ঘাড় স্বাভাবিক হয়েছে অনেকটা৷ ছোট্ট মেয়েটি এখন হাসি-খুশি আর খেলায় মেতে রয়েছে। আর ডাঃ কৃষ্ণানও এখন নিয়মিত প্রতি সপ্তাহে স্কাইপের মাধ্যমে আফসিনের শারীরিক পরিস্থিতির পরীক্ষা করেন।
এদিকে, ডাঃ রাজাগোপালন কৃষ্ণানের এই সহায়তায় কৃতজ্ঞ আফসিনের পরিবার। দাদা ইয়াকুব কুম্বার বিবিসিকে জানান, "আমরা এখন খুব খুশি। ডাক্তারবাবু আমার বোনের জীবন বাঁচিয়ে তুলেছেন। আমাদের কাছে তিনি সাক্ষাৎ দেবদূত।" তিনি আরও বলেন যে, “ডাঃ কৃষ্ণান জানিয়েছিলেন অপারেশনের সময় বোনের হৃদপিন্ড বা ফুসফুস কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। কারণ এটি খুবই জটিল অস্ত্রোপচার। তবে এই অপারেশন সফল হয়েছে তা জেনেই আমারা সকলে উচ্ছ্বসিত।”