বাবা পেশায় দিনমজুর। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়৷ এই পরিবারের ছেলেই এবার পেল আড়াই কোটি টাকার বৃত্তি। শীঘ্রই মার্কিন মুলুকের কলেজে পড়তে যাবে সে। গড়বে নিজের ভবিষ্যৎ। এমনই এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী রইল বিহার। যা সারা দেশেই সৃষ্টি করল এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বিহারের পাটনার ফুলওয়ারিশরিফের গনপুরা গ্রামের ১৭ বছর বয়সী প্রেম কুমার ভারতের প্রথম দলিত ছাত্র হিসাবে আমেরিকার লাফায়েট কলেজে পড়ার জন্য ২.৫ কোটি টাকার স্কলারশিপ পেল। যা এক রেকর্ড। ২.৫ কোটি টাকার এই স্কলার শিপের মধ্যে পড়াশুনার যাবতীয় খরচ সহ রয়েছে টিউশন ফি, স্বাস্থ্য বীমা, বই এবং যাতায়াতের খরচ। এই বিপুল অঙ্কের স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য প্রেমকে একটি পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। সেই পরীক্ষায় সারা বিশ্বে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে সে। ছেলের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পরিবার।
প্রেম বিহারের মহাদলিত মুসাহার সম্প্রদায়ের ছেলে। তার পরিবারের কেউই কলেজের গণ্ডী পেরোয়নি। সেই পরিবারের ছেলেই আজ পেল ২.৫ কোটি টাকার স্কলারশিপ! বিগত চার বছর ধরে পাটনার গ্লোবাল ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করছে প্রেম। বস্তির অন্ধকারে ভাঙা ঘরেই এতদিন পড়াশোনা করতে হয়েছে প্রেমকে। এবার সে নিজের যোগ্যতায় হাসিল করল এই দুর্দান্ত সাফল্য। জানা গিয়েছে, এই বৃত্তির জন্য ভারত থেকে মোট ৬ জনের নাম পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে একমাত্র প্রেমই পেল সেই বৃত্তি।
চলতি বছরের শেষের দিকেই আমেরিকায় রওনা দেবে প্রেম। লাফায়েট কলেজ থেকে ‘ডায়ার ফেলোশিপ’-এর জন্য নির্বাচিত হয়েছে সে। ওই কলেজেই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে পড়বে প্রেম। এই বিষয়ে ওই পড়ুয়া জানায়, "আমার বাবা-মা তেমন লেখাপড়া করার সুযোগ পায়নি। তাই এই বৃত্তি পেয়ে আমেরিকার কলেজে পড়তে যাওয়া আমার কাছে যেন স্বপ্নের মতো।"
যদিও এই বৃত্তি পেতে প্রেমের জীবন সংগ্রামও কম নয়। পরিবারের আর্থিক অবস্থা তথৈবচ। তার উপর ১২ বছর আগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে মারা যান প্রেমের মা। তাই সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব সামলেও ছেলেকে মানুষ করার উদ্দেশ্যে বহুকষ্ঠে তার লেখাপড়া চালান দিনমজুর বাবা। এই প্রসঙ্গে প্রেম বলে, "অনেক সংগ্রাম করে এই জায়গায় এসেছি। সংগ্রাম না থাকলে হয়তো এই জায়গায় আসতে পারতাম না। আমি সুযোগ পেলেই পড়াশোনায় সময় দিয়েছি। আমার বাবা মাঠে কাজ করে সংসার চালান। এভাবেই আমাকে পড়িয়েছেন।"
প্রেমের এই সাফল্যে খুশি পাটনার গ্লোবাল ইনস্টিটিউর শিক্ষকরাও। তাঁদের প্রতিষ্ঠানের এই ছাত্র এখন সারা দেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে এই স্কলারশিপ পেয়েছে। গর্বে তাই বুক ভরে গিয়েছে শিক্ষকদের। আর নিজের এই সাফল্যের জন্য প্রেম আলাদা করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডেক্সটিরিটি গ্লোবাল অর্গানাইজেশনকে। তার কথায়, "এই অর্গানাইজেশন বিহারের মহাদলিত শিশুদের জন্য কাজ করে। ওদের কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়। এই অর্গানাইজেশনের কারণেই আজ আমার এই সাফল্য। ওদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।"