বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ‘অগ্নিপথ’-এর আঁচে জ্বলছে গোটা দেশ। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কেন্দ্রের এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ দেশজুড়ে। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। দেশব্যাপী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে গোটা দেশে। ব্যাপক নষ্ট হয়েছে সরকারি সম্পত্তি। বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্টেশনে স্টেশনে ভাঙচুর করাও হয়েছে। সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে রেল পরিষেবাতে। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হয়েই চলেছে।
মোদী সরকারের এই প্রকল্প ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই দেশের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে বিক্ষোভ। এই প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরে কেন্দ্রের মোদী সরকার ভারতীয় সেনা বাহিনীতে কয়েক হাজার তরুণ নিয়োগ করবে। যাঁদের নাম দেওয়া হবে ‘অগ্নিবীর’। কিন্তু সেনায় চুক্তির ভিত্তিতে কাজ পেতে রাজি নয় আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের একটাই দাবি, এই প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করুন কেন্দ্র। এদিকে, এই পরিস্থিতিতে বড় সুখবর দিয়েছেন ইতিমধ্যেই মাহিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্রা। বছর ৬৭-র শিল্পপতি জানিয়েছেন, যোগ্য ও প্রশিক্ষিত অগ্নিবীরদের কর্মসংস্থান দেবে মাহিন্দ্রা গ্রুপ। সেই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই একই পথে হাঁটলেন টাটা সন্স-এর চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরনের গলাতেও।
এদিন কেন্দ্রের এই প্রকল্পকে একপ্রকার সমর্থন করেই এন চন্দ্রশেখরন জানিয়েছেন, যুবকদের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সেবা করার সুযোগ করে দেওয়া ছাড়াও এই স্কিম টাটা গ্রুপ-সহ ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য সুশৃঙ্খল এবং প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরি করবে। নিজের বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘অগ্নিপথের মাধ্যমে যুবকেরা শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা বাহিনীতে থেকে দেশ সেবা করার সুযোগ পাচ্ছে, তাই নয়। এরফলে টাটা গ্রুপ-সহ ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুশৃঙ্খলিত ও প্রশিক্ষিত যুবকদেরও হাজির করবে।’ এখানেই শেষ নয়, এদিন এন চন্দ্রশেখরনের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, টাটা সন্স অগ্নিবীরদের যথেষ্ট সম্ভবনাময় মনে করছে।
উল্লেখ্য, এন চন্দ্রশেখরনের আগে মাহিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্রা, RPG এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান হর্ষ গোয়েঙ্কা, বায়োকন চেয়ারপারসন কিরণ মজুমদার-শ এবং অ্যাপোলো হসপিটালস গ্রুপের জয়েন্ট এম ডি সঙ্গীতা রেড্ডি সরকারের এই স্কিমের পক্ষেই বক্তব্য রেখেছেন।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১৪ জুন কেন্দ্রের তরফ থেকে এই স্কিমের ঘোষণা করা হয়। এই প্রকল্প অনুযায়ী, চলতি বছরে কেন্দ্রের মোদী সরকার ভারতীয় সেনা বাহিনীতে প্রায় ৪৬,০০০ তরুণকে নিয়োগ করবে। যাঁদের নাম দেওয়া হবে ‘অগ্নিবীর’। ‘অগ্নিবীর’দের মাত্র ৪ বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে। পরবর্তীকালে ইচ্ছুকদের স্থায়ীকরণ করা হবে। তবে, তা মাত্র ২৫ শতাংশ। ঘোষণায় বলা হয়েছে, এই অস্থায়ী চাকরির মাধ্যমে ‘নিয়মিত ক্যাডার সেবায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদনের সুযোগ’ থাকছে। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছে দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরীক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়া পড়ুয়ারা। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতন এবং ৪ বছরের মেয়াদ শেষে এককালীন ১১ থেকে ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। যা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত।
সূত্রের খবর, ৪ বছর পর এই প্রকল্পে যোগ দেওয়া জওয়ানরা স্কিল গেইন সার্টিফিকেট, ক্রেডিট ফর হায়ার এডুকেশন সার্টিফিকেট। তবে, অবসরের পরে ওই অগ্নিবীররা পাবেন না কোনও অবসরকালীন সুযোগ- সুবিধা। এমনকি অন্য চাকরির ক্ষেত্রে ‘প্রাক্তন সেনাকর্মী’ বলেও উল্লেখ করা যাবে না। এর পাশাপাশি তাঁরা পাবেন না পেনশন, গ্র্যাচুইটির সুবিধা। কিন্তু পরে বিক্ষোভের জেরে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ২৩ বছর করা হয়। তাও মেটেনি সমস্যা।
আজ সকালেই মাহিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্রা টুইট করে জানান, ‘অগ্নিপথ প্রোগ্রাম নিয়ে আশেপাশের হওয়া ঘটনায় দুঃখিত। গত বছর যখন স্কিমটি নিয়ে কথা উঠেছিল, তখন বলেছিলাম ও আবারও বলছি, অগ্নিবীরদের শৃঙ্খলা এবং দক্ষতা তাঁদের বিশিষ্টভাবে নিয়োগযোগ্য করে তুলবে। মাহিন্দ্রা গ্রুপ এই ধরনের বিশেষ প্রশিক্ষিত, যোগ্য তরুণদের নিয়োগের এই সুযোগকে স্বাগত জানাচ্ছে।’
এদিকে, আনন্দ মাহিন্দ্রার এই পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অসংখ্য মানুষ। এক নেটিজেন প্রশ্ন করেছেন, অগ্নিবীরদের কী পদ দেওয়া হবে? এর জবাবে আনন্দ মাহিন্দ্রা জানিয়েছেন, কর্পোরেট সেক্টরে অগ্নিবীরদের জন্য প্রচুর কর্মসংস্থান রয়েছে।