বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ এবার বিলকিস বানোর অপরাধীদের মুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলল শিবসেনা। ১১ জন ধর্ষকের মুক্তি নিয়ে গোটা দেশের পাশাপাশি সমালোচনায় স্রব হয়েছে শিবসেনাও। দলীয় মুখপত্রে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তিতে বিগত কয়েকদিন ধরেই উত্তাল গোটা দেশ। দেশের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসের দিনেই বিলকিস বানো-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেয় গুজরাত সরকার। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। বিলকিস বানো-কাণ্ডে গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্তকে ইতিমধ্যেই চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। সেই সংক্রান্ত মামলায় গুজরাত সরকারকে নোটিসও পাঠানো হয়েছে দেশের শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে।
২০০২ সালে গোধরা-কাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক অশান্তি চলাকালীন ২১ বছর বয়সী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের কন্যাসন্তানকে পাথরে আছড়ে মারে হত্যা করে হামলাকারীরা। এর জেরে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। এখানেই শেষ নয়, তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই ঘৃণ্য অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই- এর বিশেষ আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই মামলায় ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। এর মধ্যে একজনের আগেই মৃত্যু হয়েছে। বাকি ১১ জনকে গত ১৫ আগস্ট মুক্তি দিয়েছে গুজরাতের বিজেপি সরকার। শুধু মুক্তি দেওয়াই নয়, বিজেপি সরকারের দাবি, ১৫ বছরেরও বেশি জেল খেটেছে ধর্ষকরা। ভালো আচরণের জন্যই তাঁদের সাজা মুকুব হয়েছে। এদিকে, বিলকিস মামলায় সাক্ষী দেওয়া ব্যক্তিদের দাবি, প্যারোলে বেরোলেই এই ১১ জন তাঁদের হুমকি দিত। সেই ধর্ষকরাই মুক্তি পাওয়ার পর, তাঁদের ফুল-মালা এবং মিষ্টি খাইয়ে সংবর্ধনা জানানো হয় গ্রামে।
এই ঘটনার পর থেকেই বিজেপি সরকারের সমালোচনায় সরব গোটা দেশ। সমাজের নানা স্তরের মানুষ থেকে রাজনীতিবিদ সকলেই এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন। এমনকি ভারতের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু গত রবিবার টুইট করে বলেন, ‘আমেরিকার প্রাইম টাইম টিভি নিউজ বিলকিস বানোর মামলা কভার করল। এই নৃশংস অপরাধের মূলচক্রীদের কী ভাবে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন মুক্তি দেওয়া হল! মর্মান্তিক!’
এবার সমালোচনায় সরব রয়েছে শিবসেনাও। শিবসেনার দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’য় গুজরাত সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, ‘প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তান বা বাংলাদেশ এ ধরনের নৈরাজ্য ঘটলে আমরা সমালোচনায় সরব হই, তা হলে বিলকিস বানোর মামলায় সেই সহমর্মিতা কোথায় গেল?’ উল্লেখ্য, এনসিপি সুপ্রিমো প্রধান একবার বলেছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যা বলেন, নিজে তা মেনে চলেন না। শিবসেনা মুখপত্রে দাবি করা হয়েছে, ‘বিলকিসের ঘটনাই প্রমাণ পাওয়ারের মন্তব্যকে সত্য প্রমাণ করে দিল। স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী যখন মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বলছেন, তখন ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে! প্রধানমন্ত্রী মোদী আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এখন চুপ কেন? ধর্ষকদের সংবর্ধনা জানানো কি হিন্দু সংস্কৃতি?’
এখানেই শেষ নয়, শিবসেনার বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি প্রসঙ্গে স্পষ্ট বক্তব্য, ‘শুধুমাত্র বিলকিস মুসলিম বলে তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধকে ক্ষমা করা যায় না। এটা হিন্দু-মুসলিমের বিষয়ও নয়, বরং হিন্দুত্বের ধারা এবং আমাদের মহান ঐতিহ্যের প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী যখন গুজরাট আসেন, তাঁর উচিত বিলকিসের সঙ্গে দেখা করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।’