বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সপ্তাহ শুরুতেই জাতীয় রাজনীতিতে বড় দুঃসংবাদ। দেশের রাজনৈতিক মহলে নক্ষত্রপতন ঘটল। থামল লড়াই, প্রয়াত হলেন, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। মুলায়ম সিং যাদবের মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহলে শোকের বাতাবরণ।
সোমবার সকালে, সাড়ে ৮ টা নাগাদ গুরুগ্রামের এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে একাধিক শারীরিক সমস্যা নিয়ে গুরুগ্রামের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত ২ বছর ধরেই তিনি নানা শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। সোমবার সকালে থেমে গেল লড়াই। জানা গিয়েছে, তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে গুরুগ্রামের মেদান্ত হাসপাতালে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার আচমকাই তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, রবিবার রাতে সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমোর শরীরে অক্সিজেনের স্তর অনেকটাই নেমে গিয়েছিল। অক্সিজেনের স্তর বাড়িয়ে প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় মুলায়মের শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় আনা গেলেও, শেষরক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সোমবার সকালেই মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ যাদব বাবার মৃত্যুর খবর জানান। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সমাজবাদী পার্টিতে, তাঁর কথাই ছিল শেষ কথা।
মুলায়ম সিং যাদবের প্রয়াণে টুইটে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা। এদিন জাতীয় রাজনীতির দ্বিতীয় ‘নেতাজি’র প্রয়াণে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার।
এদিন মুলায়ম সিং যাদবের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে লেখেন যে, ‘মুলায়ম সিং যাদবজী উত্তরপ্রদেশ তথা জাতীয় রাজনীতিতে নিজের আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন। জরুরি অবস্থায় তিনি গণতন্ত্রের লড়াইয়ের অন্যতম সৈনিক ছিলেন। শক্তিশালী ভারত গড়তে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন।’
অপর একটি টুইটে তিনি আরও বলেন যে, ‘আমরা যখন আমাদের নিজ নিজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি তখন মুলায়ম সিং যাদবজী-এর সঙ্গে আমার অনেক যোগাযোগ ছিল। ঘনিষ্ঠ মেলামেশাও অব্যাহত ছিল এবং আমি সবসময় তাঁর মতামত শোনার জন্য উন্মুখ থাকতাম। তাঁর মৃত্যুতে আমি শোকাহত। তাঁর পরিবার ও লক্ষাধিক সমর্থকের প্রতি সমবেদনা রইল। ওম শান্তি।’
প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি মুলায়ম সিং যাদবের প্রয়াণে টুইটে শোকপ্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। তিনি টুইট করে লিখেছেন, ‘বহু দশক ধরে নিজের অনবদ্য রাজনৈতিক দক্ষতার মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন মুলায়ম সিং যাদবজী। জরুরি অবস্থায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সোচ্চার হয়েছিলেন। তৃণমূল স্তরের সাধারণ মানুষের নেতা হিসেবেই তিনি সকলের মনে থাকবেন। ওনার প্রয়াণে ভারতীয় রাজনীতির এক অধ্যায়ের সমাপ্তি হল।’
অন্যদিকে, রাজ্যে তিনিদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে টুইটে শোকপ্রকাশ করেছেন যোগী আদিত্যনাথ। মুলায়ম সিং যাদবের প্রয়াণের খবর পাওয়ার পর মুলায়ম-পুত্র অখিলেশের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন উত্তরপ্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, এদিন মুলায়ম সিং যাদবের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই এক এক করে শোকবার্তা জানাচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ১৯৩৯ সালের নভেম্বর মাসে নভেম্বরে উত্তরপ্রদেশের এটাওয়ায় জন্ম হয় সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদবের। পড়াশোনার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞান-এর উপরেই তাঁর তিন-তিনটে ডিগ্রি রয়েছে। এরপর রাজনীতির আঙিনায় পা দেওয়া এবং তিনবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সিংহাসনে বসেছিলেন- ১৯৮৯, ১৯৯৩ এবং ২০০৩ সালে।
অন্যদিকে, ১৯৯৬ সাল থেকে ৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন কেন্দ্রের দেবেগৌড়া সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সাংসদ হন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার তিনি সাংসদ হন। তবে, ২০০৪ সালে মুখ্যমন্ত্রিত্বের কারণে আর লোকসভা ভোটে লড়াই করেননি। শেষ লোকসভা নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৯ সালেও উত্তরপ্রদেশের মইনপুরী থেকে সাংসদ হন মুলায়ম সিং যাদব। ২০০৯ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সংসদের সদস্য ছিলেন উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে ‘নেতাজি’ বলে পরিচিত এই বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
মুলায়ম সিং যাদবের রাজনৈতিক জীবনে সাফল্য থাকলেও, তাঁর প্রতিষ্ঠিত দলেই ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। ধীরে ধীরে পরিবারের সদস্যরাও একে অপরের সঙ্গে রাজনৈতিক বিবাদে লিপ্ত হন। এই সমস্যা সরাসরি প্রভাব পড়েছিল খোদ মুলায়মের উপরেও। ছেলেকে নিয়ে চিন্তা থাকলেও, দলের ভার তিনি পুত্র অখিলেশের উপরেই দিয়েছিলেন। জীবনের শেষদিকে, দলের করুণদশা তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। দলের অবস্থা তাঁকে যন্ত্রণা যে দিয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই। তাঁর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে একটা যুগের অবসান হল।