বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ আজকের সকাল ১০ টা ১৫ মিনিট, এক নয়া ইতিহাসের সাক্ষী থাকল সংসদের সেন্ট্রাল হল। দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা তথা সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। এদিন তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করালেন দেশের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা। দেশের প্রথম আদিবাসী হিসেবে দেশের শীর্ষ সাংবিধানিক পদে শপথ নিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। এদিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে সকালে রাজঘাটে গিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন দেশের নয়া রাষ্ট্রপতি। পাশাপাশি এদিন দেশের সদ্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গেও দেখা করেন দ্রৌপদী মুর্মু।
এদিন দ্রৌপদী মুর্মুর শপথবাক্য পাঠের সময় তিনি কী ধরনের শাড়ি পড়বেন তা নিয়ে প্রথম থেকেই চর্চা ছিল। জল্পনা ছিল যে, রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেওয়ার সময় দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা বছর চৌষট্টির দ্রৌপদী সনাতনী সাঁওতালি শাড়িকেই সম্ভবত বেছে নেবেন। উল্লেখ্য, এমনই একটি শাড়ি নিয়ে শনিবারই দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন দ্রৌপদীর ভাইয়ের স্ত্রী সুকরি টুডু। কিন্তু জল্পনা থাকলেও তেমনটা এদিন দেখা গেল না। এর আগে দ্রৌপদীর ভাইয়ের স্ত্রী সুকরি টুডু জানিয়েছিলেন যে, ‘দিদির জন্য আমি সাঁওতালদের ঐতিহ্যবাহী শাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি শপথ অনুষ্ঠানে দিদি এই শাড়িই পড়বেন। তবে, এদিন দ্রৌপদীর পরনে ছিল তেরঙ্গা শাড়ি। উল্লেখ্য, দ্রৌপদী মুর্মু দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, যিনি স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন।
১৯৫৮ সালের ২০ জুন ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার উপরবেদা গ্রামে এক সাঁওতালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডু। গ্রামের প্রথম মহিলা হিসাবে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সেদিনই সবাইকে অবাক দিয়েছিলেন তিনি। দ্রৌপদী মুর্মুর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল একজন শিক্ষিকা হিসেবে। দ্রৌপদী মুর্মু ওডিশার প্রাক্তন মন্ত্রী ছিলেন এবং ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রায়রাংপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিজেপি এবং বিজেডি’র জোট সরকার থাকাকালীন তিনি মন্ত্রীত্ব সামলেছেন। তাঁর দায়িত্বে ছিল পরিবহণ, পশুপালন এবং মৎস্য দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। দৌপদী মুর্মু ঝাড়খণ্ডের নবম রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনিই ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল, যিনি রাজ্যপালের পাঁচ বছরের কার্যকালের মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এককথায়, তিনি দ্রৌপদী মুর্মুর জীবন অনেকের কাছেই এক অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি।
আজ দেশের সর্বকনিষ্ঠ তথা স্বাধীন ভারতে জন্ম নেওয়া প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। এদিন দেশের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পরে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন যে, তাঁর এই কৃতিত্ব দেশের প্রতিটি দরিদ্র মানুষের কৃতিত্ব এবং কোটি কোটি নারীর ক্ষমতার প্রতিফলন। এদিন নয়া রাষ্ট্রপতি শপথগ্রহণ উপলক্ষে নতুন সাজে সেজে উঠেছিল সংসদভবন চত্বর। এদিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদ্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিশিষ্ট অতিথিবর্গ।
এদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে দ্রৌপদী মুর্মু বলেন, ‘স্বাধীনতার ৭৫ তম বছরে দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেয়ে আমি সম্মানিত। স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণকারী আমিই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। আমি একটি ঐতিহাসিক সময়ে এই দায়িত্ব নিতে পেরে সম্মানিত। এমন এক সময়ে আমি এই দায়িত্ব পেলাম যখন ভারত আগামী ২৫ বছরের স্বপ্ন পূরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
দেশের নয়া রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য আমি সমস্ত সাংসদ এবং বিধানসভার সমস্ত সদস্যদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনার একটি ভোট দেশের কোটি কোটি নাগরিকের বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।’ ভাষণে দ্রৌপদী মুর্মু বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদে পৌঁছানো আমার ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, এটি ভারতের প্রতিটি দরিদ্রে মানুষের কৃতিত্ব। আমার মনোনয়ন প্রমাণ করে যে, ভারতের দরিদ্ররা শুধু স্বপ্ন দেখতে নয়, সেই স্বপ্নগুলিও পূরণ করতে পারে।’ পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি চাই মহিলারা আরও ক্ষমতার অধিকারী হোন, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলারা তাঁদের অবদান ক্রমশই বাড়িয়ে তুলছেন।’
এরপরই তিনি কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। বলেন, ‘গরীব ঘরে জন্ম নেওয়া মেয়ে, প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকায় জন্ম নেওয়া এক মেয়ে ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে পৌঁছাতে পারে এটাই আমাদের গণতন্ত্রের শক্তি।’ দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি সমস্ত দেশবাসীকে, বিশেষ করে ভারতের যুবক ও মহিলাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে, এই পদে কাজ করার সময়, তাদের স্বার্থ আমার কাছে সর্বাগ্রে বিবেচিত হবে`। তিনি এও বলেন যে, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের ৭৫ বছরে, ভারত ঐক্যমতের মাধ্যমে অগ্রগতির সংকল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এখন দেশ আগামী ২৫ বছরের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
অন্যদিকে, আগামী ২৬ জুলাই কার্গিল দিবস উপলক্ষে দেশের সেনাবাহিনীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার ২৬ জুলাই কার্গিল বিজয় দিবস। দিনটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীরত্বের প্রতীক। আমি কার্গিল বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং দেশের সকল নাগরিককে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’