বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ এবার যোশীমঠকে সরকারিভাবে ‘ডুবন্ত শহর’ বলে ঘোষণা করল উত্তরাখণ্ড সরকার। যোশীমঠকে আতঙ্ক ক্রমশ বেড়েই চলেছে। উত্তরাখণ্ড পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই ছোট্ট শহরের সর্বত্রই এখন বড়বড় ফাটল। যা ক্রমশ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চওড়া হয়ে চলেছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ঘোষণা করলেন যে, এই শহর আর বসবাসের উপযুক্ত নয়। এখানকার পৌর এলাকাগুলিকে ‘বিপর্যস্ত’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এই মুহূর্তে এতোটাই ভয়াবহ যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে ফোন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ধামির কাছে।
একের পর এক বাড়ি খালি করা হচ্ছে। হাড় কাঁপুনি ঠাণ্ডার মধ্যেই ঘরছাড়া একাধিক পরিবার। যোশীমঠ যেন এখন কার্যত এক ডুবন্ত জাহাজ। এদিকে, এবার ফাটল দেখা দিয়েছে শঙ্করাচার্য মঠেও। ফাটল দেখা দেওয়ার কারণেই আগেই ৫০০ টি বাড়ি খালি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যোশীমঠ প্রশাসন। গত শনিবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর সেই তালিকায় আরও যোগ হয়েছে আরও ৬৫ টি পরিবার। ১১ টি পরিবারের স্থান হয়েছে অস্থায়ী শিবিরে। সব মিলিয়ে ইতিমধ্যেই ফাটল বিপর্যয়ের জেরে ৬০৩ টি বাড়ি খালি করেছে প্রশাসন। এবার বিপজ্জনক এলাকা থেকে আরও ৯০ টি পরিবারকে সরাতে হবে বলেই জানিয়েছেন প্রশাসন।
প্রত্যেক মুহূর্তে আরও জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। তাই এদিকে নজর রেখেই রবিবার উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠক ডেকেছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্রর ডাকা এই বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিব, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে ছিলেন স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তারা।
এদিকে, চামোলি জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী যোশীমঠের বিভিন্ন এলাকা খতিয়ে দেখে বিপজ্জনক বাড়িগুলিকে চিহ্নিত করছেন। যোশীমঠের নয়টি ওয়ার্ডের ৬০৩ টি বাড়িতে ফাটল ধরেছে আগেই জানা গিয়েছে। এরপর রবিবার জেলা প্রশানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন খোদ জেলাশাসক। বড় বিপদ থেকে বাঁচতে স্থানীয়দের তিনি এলাকা ছাড়ার অনুরোধ করেন। এদিন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ধামি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী ফোন করে পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন। এই বিষয়ে তিনি টুইট করে জানিয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যোশীমঠের সাম্প্রতিকতম বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথও। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার যোশীমঠ-মালারি বর্ডার রোড এই এলাকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করে চিনা বর্ডারকে। এবার সেই সীমান্তগামী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথের একাধিক জায়গায় দেখা দিয়েছে ধস। সেই কারণেই এই সড়কপথের বহু জায়গাতেই বড় বড় ফাটল তৈরি হয়েছে। এই বিষয়টিও চিন্তায় রাখছে প্রশাসনকে। আবার যোশীমঠ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। জ্যোতির্মঠের শংকরাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন, এই সংকটকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। এর পাশাপাশি তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছেন। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে দ্রুত তাঁদের কাজ করার অনুরোধও জানিয়েছেন শংকরাচার্য।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সমস্যা আজকের নয়, অনেক দিনের। গত কয়েক বছর ধরেই উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার একাধিক জায়গায় মাটি বসে গিয়ে ফাটল দেখা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। গত সপ্তাহেই এই সমস্যা বৃহৎ আকার নেয়। একটু একটু করে মাটির নীচে ধসে যাচ্ছে একটা গোটা শহর, যোশীমঠ। উল্লেখ্য, এই যোশীমঠ কেদার, বদ্রী-সহ চারধাম যাত্রার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। সারা বছর জুড়েই পুণ্যার্থীদের আনাগোনা লেগেই থাকে। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে এর মধ্যে সড়ক, গৃহস্থ বাড়ি সহ বড় বড় হোটেলে বড়বড় ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছে। গত শুক্রবারই সন্ধের দিকে একটি মন্দির ধসে পড়ে।
কিন্তু এই ধসের কারণ কী? বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এর পিছনে দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। এছাড়া, ক্রমাগত পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়া, রাস্তা চওড়া করতে পাহাড়ে একের পর এক বিস্ফোরণ, একাধিক হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্লান্ট তৈরি করা, এসব কিছুই ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে উত্তরাখণ্ডের প্রকৃতিতে। যার চাপ নিতে পারছে না যোশীমঠ।