কথায় বলে, মানুষের সেরা বন্ধু তার পোষ্য! জীবনের যে কোনও পরিস্থিতিতে, সময়-অসময়ে চরম বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়ায় পোষ্যরাই। আসলে পোষ্যের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। তাই পোষ্যের সঙ্গে মনিবের ভালোবাসার টানও হয় নিবিড়! ফলে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, মনিবকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভুলেও ভাবে না কোনও পোষ্যই! এবারও ঠিক সেটাই প্রমাণ করে দেখাল `উন্নিকুট্টন`!
বাথরুমে পড়েছিল মনিবের মৃতদেহ। আর সেই দেহ আগলে গোটা একদিন ধরে পাহারা দিল পোষ্য কুকুর উন্নিকুট্টন। এক মুহূর্তের জন্যও সেই মরদেহ ছেড়ে কোত্থাও যায়নি সে। শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই ঘটেছে কেরালার ইদ্দুকিতে। সেখানে নিজের বাড়িতে এই পোষ্যকে নিয়ে একাই থাকতেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী কেনাক্কল কেকে সোমন। উন্নিকুট্টনকে নিজের হাতে স্নান করানো, খাওয়ানো থেকে দেখভাল, সবটাই একা হাতে করতে বছর সাতষট্টির এই প্রৌঢ়। ফলে পোষ্য কুকুরটির সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল তাঁর।
গত শনিবার সন্ধ্যেয় বাথরুমে গিয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় সোমনের। বাথরুমেই পড়ে ছিল তাঁর দেহ। আর সেই তখন থেকে মৃত মনিবের পাশে ঠায় বসেছিল পোষ্য উন্নিকুট্টন। মৃতদেহ ছেড়ে একটি বারের জন্যও নড়েনি সে। পরদিন সকালে সোমেনের জামাই উমেশ শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখেন কাণ্ড! তিনিই তখন প্রতিবেশী এবং পুলিশে খবর দেন।
উমেশ জানিয়েছেন, "শনিবার রাত থেকেই ফোনে শ্বশুরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তিনি ফোন ধরছিলেন না। রবিবার সকালে আমি তাই শ্বশুরবাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখিই উন্নিকুট্টন আমার দিকে ছুটে এল। আমি দেখি ঘরের দরজা খোলা। লাইট, ফ্যান চলছে। কিন্তু শ্বশুরের কোনও সাড়াশব্দ পাচ্ছিলাম না। তখনই বুঝি কিছু একটা হয়তো ঘটেছে।"
তিনি আরও বলেন, “উন্নিকুট্টন যেন পরিচিত কারোর জন্যই অপেক্ষা করছিল। আমি যেতেই ও আমার কাছে ছুটে আসে। আমি ওকে অনুসরণ করতেই ও বাথরুমের সামনে দৌড়ে গেল এবং আমার দিকে ক্রমাগত ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করল। তখনই আমি বাথরুমে ভিতরে দেখি। ওই ভাবে শ্বশুর মশাইয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে চমকে উঠেছিলাম।"
এরপরই প্রতিবেশীদের ডাকেন উমেশ। পুলিশে খবর দেওয়া হয়৷ উমেশ জানান, পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করতে গেলে উন্নিকুট্টন বেশ হিংস্র হয়ে উঠেছিল। পুলিশকর্মীরা বাথরুমের দিকে এগোতেই তাঁদের কামড়াতে যায় সে। যেন কিছুতেই মনিবের দেহ নিয়ে যেতে দেবে না। পরে বহু চেষ্টায় সেই মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যান পুলিশকর্মীরা।
উমেশ বলেন, “উন্নিকুট্টন সারারাত ধরে শ্বশুর মশাইয়ের কাছ থেকে নড়েনি। পরিচিত কেউ আসার আশায় সারাক্ষণ দেহ আগলে বসেছিল। পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে এলে ও কিছুতেই নিয়ে যেতে দিচ্ছিল নাম আমি পরে ওকে শান্ত করিয়ে অন্যঘরে নিয়ে যাই। তারপর পুলিশ দেহ উদ্ধার করে।"
এদিকে সোমেনের মৃত্যুপ্রসঙ্গে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, "পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছে যে উনি হার্ট অ্যাটাকের কারণে মারা গিয়েছেন। আমরা সন্দেহ করছি শনিবার সন্ধ্যায় মারা গিয়েছেন সোমেন৷ যদিও ঘটনাটি পরের দিন প্রকাশ্যে আসে।" আপাতত ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ দাহ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
- TAGS
- Dog
- Death
- Kerala
- Kerala News