বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল। আজ কর্ণাটক হাইকোর্টে বিতর্কিত হিজাব মামলার রায়দান হল। আজ কর্ণাটক হাইকোর্ট এই মামলায় রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিল যে, ইসলামে হিজাব অপরিহার্য নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে কর্ণাটক হাইকোর্টর এই রায় নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক রায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে যে সব আবেদন জমা পড়েছিল, এদিন তা খারিজ করে দেয় কর্ণাটক হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি কর্ণাটক সরকারের শিক্ষা বিভাগ নির্দেশিকা অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হিজাব নিষিদ্ধ করা হয় । এরপরই সরকারের এই নির্দেশিকাকে কেন্দ্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উদুপি জেলায় কলেজ পড়ুয়া মুসলিম ছাত্রীরা এই নির্দেশের বিরুদ্ধে মামলা করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ মামলার শুনানির শুরুতেই এই এই মামলার আবেদনকারীরা দাবি করেন, ক্লাসরুমে হিজাব পড়ার অধিকার ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতারই অঙ্গ। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থি, বিচারপতি কৃষ্ণ এ দীক্ষিত এবং জাইবুন্নিসা মহিদিন খাজির বেঞ্চ রায়দান স্থগিত রাখেন। আর আজ এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়দান হল অবশেষে। হিজাব বিতর্কে কর্ণাটক সরকারের নির্দেশের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছিল। কর্ণাটকের বিজেপিশাসিত সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয় বিরোধী দলগুলিও।
শেষে এদিন কর্ণাটক হাইকোর্ট তার রায়ে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল যে, হিজাব ইসলামে বাধ্যতামূলক নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট এবং নিজস্ব ড্রেস কোড থাকতেই পারে। উল্লেখ্য, এর আগে হিজাব বিতর্ক শুরু হলে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর ব্যক্তিগত মতামতে বলেছিলেন যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক নয়, ইউনিফর্ম পরাই উচিত। কিন্তু যেহেতু বিষয়টি তখন আদালতের বিচারাধীন ছিল, তাই তিনি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি। তিনি জানিয়েছিলেন, কোর্ট যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই মানা হবে। তবে, এবার কর্ণাটকের বিজেপিশাসিত সরকারের পক্ষেই গেল হাইকোর্টের রায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কর্ণাটকের এই হিজাব বিতর্কের রেশ অনেক দূর গড়িয়েছিল। এই বিতর্কে মুখ খুলেছিলেন অনেকেই। এর মধ্যে যেমন রয়েছেন পাক বিদেশ মন্ত্রী তেমনই রয়েছেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। এমনকি হিজাব বিতর্কে ভারতের সমালোচনা করতে দেখা গেছে আমেরিকাকেও। যদিও ভারতের সেসব মোটেও ভালভাবে নেয়নি আর পাত্তাও দেয়নি। বরং দেশের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এটা ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়। এই ব্যাপারে বাইরের কারোর হস্তক্ষেপ বা উস্কানিমূলক মন্তব্য সহ্য করা হবে না।
অন্যদিকে, এবার এটাই দেখার যে, পূর্ব আশঙ্কা মতো হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন কিনা। তবে, রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশের পক্ষ থেকে আশা করে হচ্ছে যে, অতি দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে। কারণ রাজ্যে দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে চলতি মাসের ২৮ তারিখ থেকে। পাশাপাশি একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাও হয়েছে এপ্রিলে। কাজেই এই বিষয়কে কেন্দ্র করে অশান্তির সৃষ্টি হলে, তার প্রভাব পড়বে পরীক্ষার উপরে। তেমন হলে পরীক্ষা পিছিয়েও যেতে পারে।