বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ হঠাৎ করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সাদা পোশাকে পুলিশ বেশ কয়েকজন মুসলিম যুবককে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারা হচ্ছে। এদিকে, ওই দৃশ্য দেখার পরেও পথচলতি বা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের মধ্যে সহানুভূতির লেশ মাত্র নেই। উল্টে তাঁরা মারধরের ব্যাপারটিতে বেশ মজাই পাচ্ছেন। আর এটা দেখেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে নেটদুনিয়া।
এই ভিডিও দেখার পরে, অনেকেই সংখ্যালঘুদের উপরে এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, নবরাত্রির অনুষ্ঠানে একাধিক জায়গায় হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মোদী-গড় গুজরাটে। পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছে গরবা অনুষ্ঠানে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬ জন। আর সেই পাথর ছোঁড়ার অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযুক্তদের প্রকাশ্যে মারার ভিডিও সামনে এসেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আরিফ এবং জাহির নামে দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে একদল লোক সমস্যার সৃষ্টি করে। তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে বলেই জানা গিয়েছে।
বস্তুত, পুলিশ জানিয়েছে যে, সোমবার রাতে গুজরাটের খেড়ার উন্ধেলা গ্রামে নবরাত্রি উদযাপনের সময় হামলা চালানো হয়। যেখানে গরবা নাচ হচ্ছিল, সেখানে হামলা চালানো হয়। শুধু ওখানেই নয়, ওই অনুষ্ঠানস্থলের পিছনের অ্যাপ্রোচ রোডেও চলে হামলা। সেই সঙ্গে ছোঁড়া হয় পাথর। এর জেরেই কমপক্ষে ৬ জন আহত হন।
এই ঘটনার পরই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁদের গ্রেফতার করে গ্রামবাসীদের সামনে আনা হয়। মঙ্গলবার পশ্চিম গুজরাটের খেরা জেলায় এই ভিডিও ক্লিপটি রেকর্ড করা হয়েছে। এরপরই তা দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে দেখা গিয়েছে, সিভিল পোশাক পরা একদল পুলিশ অন্তত ৪-৫ জনকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখেছে এবং লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে আবার একজন পিস্তল নিয়েও ঘুরছেন।
এদিকে, সেখানে উপস্থিত উত্তেজিত জনতা ‘মারো, মারো’ বলে চিৎকার করতে থাকে। এরপরই ক্ষমা চাইতে দেখা যায় ওই লোকগুলিকে। উল্লেখ্য, গরবা হল গুজরাটের একটি ঐতিহ্যবাহী নাচ যা হিন্দুরা দেবী দুর্গার মহিসাসুরের বিরুদ্ধে জয় উদয়াপনের জন্য নয় দিনের নবরাত্রি উৎসবে পরিবেশিত হয়ে থাকে। এদিকে, এই মারধরের ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে কোনওরকম ব্যবস্থা নেয়নি। তাই অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করে।
অন্যদিকে, গুজরাটের আইজি আশিস ভাটিয়া গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে এবং ঘটনাটি ঘটার সময় যারা ভিডিও করেছিল তাদেরও এই তদন্তের আওতায় আনা হবে বলেই জানা গিয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে টুইটে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। তিনি লেখেন, ‘উত্তরপ্রদেশ, আসামের পর এবার গুজরাত। রাজ্য পুলিস নিজেরাই বিচারক এবং জল্লাদ হয়ে যাচ্ছে। পুলিসই যদি এমন কাজ করে তাহলে বুঝতে হবে ভারত ক্রমশ সভ্য, আধুনিক রাষ্ট্র থেকে রূপান্তরের দিকে এগিয়ে চলেছে।’
আবার এই ঘটনা প্রসঙ্গে প্রাক্তন রাজনীতিক এবং মুসলিম ভাষ্যকার শাহিদ সিদ্দিকি বলেছেন, পুলিস অভিয়ুক্ত মুসলিমদের মারধর করছে এবং তা দেখে সাধারণ মানুষ উল্লাসে মেতেছে, যা ‘ভয়ঙ্কর এবং লজ্জাজনক’।