বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী মঙ্গলবার উত্তরাখণ্ডের তরুণী অঙ্কিতা হত্যা মামলায় সঠিক বিচারের দাবিতে বিজেপিকে একহাত নিলেন। বিজেপিকে কার্যত তুলোধোনা করলেন তিনি। বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্ষকদের বাঁচানোর মতো মারাত্মক অভিযোগ তুলে রাহুল গান্ধী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্লোগান ‘বেটি বাঁচাও’, কিন্তু বিজেপির ‘কাজ’ ধর্ষকদের বাঁচানো।
এই মুহূর্তে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় রয়েছেন রাহুল গান্ধী। এর মাঝেই অঙ্কিতা খুনের ঘটনায় সরব হয়েছেন রাহুল গান্ধী। অঙ্কিতার যথাযথ বিচারের দাবিতে কেরালায় মিছিলে যোগ দেন তিনি। এতে মহিলা কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নেতা ডি’সুজা-সহ আরও অনেক নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
কংগ্রেসের সাংসদ রাহুল গান্ধী এদিন টুইট করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্লোগান – বেটি বাঁচাও, আর বিজেপির কাজ – ধর্ষককে বাঁচাও’। এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেছেন যে, ভারত এখন চুপ করে বসে থাকবে না। জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘জাস্টিস ফর অঙ্কিতা’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে ইতিমধ্যে প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে।
কেরালার এক জনসভায় রাহুল গান্ধী বলেন, ‘বিজেপির নিজের ভাবমূর্তি রক্ষায় ব্যস্ত। রিসোর্টে অঙ্কিতা ভান্ডারির সঙ্গে ঠিক কী আচরণ করা হয়েছিল তা আজ আপনাদের সবার সামনে। উত্তরাখণ্ডে অঙ্কিতাকে রিসোর্টের মালিক তথা বিজেপির দাপুটে প্রাক্তন মন্ত্রীপুত্র যে ভাবে হত্যা করেছে তা থেকে স্পষ্ট বিজেপি মহিলাদের কতটা সম্মান করে!’
ঘটনার সূত্রপাত এক সপ্তাহ আগে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর উত্তরাখণ্ডের কাছে হৃষীকেশের কাছে বিজেপি নেতা বিনোদ আর্যর ছেলে পুলকিত আর্যর রিসর্টে কর্মরত বছর ১৯-এর তরুণী রিসেপশনিস্ট অঙ্কিতা ভান্ডারি নিখোঁজ হয়ে যান। কাজে না যাওয়ার পরই মূল অভিযুক্ত পুলকিত ওই তরুণীর খোঁজ-খবর শুরু করে এবং নিজে থেকেই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে। পরে তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকেও নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। প্রথম থেকেই তরুণীর পরিবারের সন্দেহ ছিল পুলকিতের উপরে। এর মধ্যেই অভিযোগ উঠতে শুরু করে যে, বিজেপি নেতার ছেলেই ওই তরুণীকে খুন করেছে। অভিযোগ ওঠে, পুলকিত ওই তরুণীকে যৌনতার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণেই খুন করা হয় তাঁকে। পুলিশও প্রথম দিকে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
গত শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই যুবতীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা এবং পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। রিসর্টে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। রিসর্টের ম্যানেজার সৌরভ ভাস্কর এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার অঙ্কিত গুপ্তা খুনে সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ। তিন জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খুন করে দেহ চিল্লা খালে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে পুলকিত ইতিমধ্যেই। ওই তিনজনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি অঙ্কিতার দেহের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়।
অবশেষে গত শনিবার হৃষিকেশের একটি খালের ধার থেকে অঙ্কিতার দেহ উদ্ধার হয়। ওই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে উত্তরাখণ্ডের একটি আদালত। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, জলে ডুবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে অঙ্কিতার। অঙ্কিতার পরিবার এবং স্থানীয়দের দাবি, মূল অভিযুক্তের বাবা প্রভাবশালী বিজেপি নেতা হওয়ার কারণেই পুলিশের এই ঢিলেমি।
তবে, এই ঘটনায় দোষীরা কঠোর শাস্তি পাবে বলেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের অপরাধের জন্য কঠোরতম শাস্তি হওয়া উচিৎ।’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। পুলিশ তদন্ত করছে, ইতিমধ্যেই মূল আসামীকে গ্রেফতার করা এই ধরনের জঘন্য অপরাধের জন্য কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে, অপরাধী যেই হোক না কেন।’ অন্যদিকে, ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই উত্তরাখণ্ড প্রশাসন গুঁড়িয়ে দেয় অভিযুক্ত পুলকিতের হৃষীকেশের ভানাতারা রিসর্ট। বেআইনি নির্মাণ দেখিয়ে। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত পুলকিত আর্যর বাবা বিনোদ আর্যকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিজেপি।