জল্পনার অবসান! বিহার সরকারের পতন, ভাঙল বিজেপি-জেডিইউ জোট, আজই কি ইস্তফা নীতীশের?
বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ অবশেষে দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটল। বিহারে সরকারের পতন হল। সেই সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে গেল বিজেপি-জেডিইউ জোট। আজই জে ডি ইউ সাংসদ এবং বিধায়কদের নিয়ে নিজ বাসভবনে বৈঠক করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। সেই বৈঠকের পরেই জানা যায় যে, আর বিহারে থাকছে না জেডিইউ ও বিজেপির জোট। এর পাশাপাশি সূত্রের এও খবর যে, আজই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন নীতীশ কুমার।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরেই নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে জোটসঙ্গী বিজেপির সঙ্গে দুরত্ব বেড়েছে নীতীশ কুমার তথা জনতা দলের। এমনকি এবারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে হওয়া নীতি আয়োগের বৈঠকেও অনুপস্থিত ছিলেন নীতীশ কুমার। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস এবং আরজেডি নীতীশকে সমর্থনের কথা জানিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, পাঁচ বছর পরে ফের বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহাজোট’ গড়তে সক্রিয় হতে পারেন নীতীশ কুমার। বিহার বিধানসভায় এই মুহূর্তে আরজেডি-র ৮০ জন বিধায়ক। আর কংগ্রেসের হাতে রয়েছে ১৯ জন বিধায়ক। তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে থাকা মহাগাঁটবন্ধনের হাতে মোট বিধায়ক ১১০ জন। ২০১৫ সালের মডেলে জেডিইউ-আরজেডি-কংগ্রেস হাত মেলালে সরকার তৈরি সম্ভব। সেটা হলে, রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ২০১৫-১৭ ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে।
মহারাষ্ট্রের মহানাটক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিহারেও পালাবদলের সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল। যদিও এক্ষেত্রে একটু পার্থক্য আছে। মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পালাবদলে বিজেপির ভূমিকা ছিল। মহারাষ্ট্রের মহাবিকাশ আগাড়ির ঘর ভাঙিয়ে সেখান শিন্ডে-বিজেপি সরকার গঠন করেছে গেরুয়া শিবির। তবে, বিহারে বিজেপিরই ঘর ভাঙল। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে বিজেপি-জেডিইউ জোটবদ্ধ হয়ে, বিহারে সরকার গঠন করেছিল। এরপর দুবছর কাটতেই সেই সরকারের পতন হল।
কিছুদিন ধরেই জল্পনা ছিল সরকার পতনের। গতকালই জেডিইউ সাংসদ ও বিধয়াকদের সঙ্গে বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।সেই অনুযায়ী, আজ বৈঠকও হয়। আর সেই বৈঠকের পরেই জোট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, প্রায় ২ ঘণ্টার বৈঠকের মাঝেই জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ কুমার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ফোন করে সম্পর্ক ভাঙার কথা সরকারিভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আবার সূত্রের এও খবর, বিজেপিও জোটে থাকতে চায় না। এদিকে, ইতিমধ্যেই কংগ্রেস ও আরজেডি নীতীশকে সমর্থনের কথা জানিয়ে দিয়েছে। এদিন রাজভবনে বিকেল ৪ টেয় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা। সেখানে জেডিইউ ও আরজেডির বিধায়করা রাজভবনে পৌঁছে যাবেন বলে জানা যাচ্ছে।
রাজনৈতিকমহল বলছে, বিহারের জনতা দল এবং বিজেপির মধ্যে দুরত্বের সূত্রপাত হয়েছিল ভোট সম্পন্ন হওয়ার পর থেকেই। প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি বিধায়ক সুশীল মোদী ছিলেন নীতীশ ঘনিষ্ঠ। কিন্তু এবারের সরকার গঠনের পরই তাঁকে সরিয়ে দেয় বিজেপি। ওই জায়গায় বসানো হয় তারকিশোর প্রসাদ এবং রেণু দেবীকে। এমনকী, সুশীলকে বিহারের বাইরে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটা একেবারেই ভালোভাবে নেয়নি বিহারের জনতা দল। একের পর এক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘনিষ্ঠদের বিহারের মন্ত্রী করেছিল বিজেপি। এরপরই জেডিইউ-এর ধারণা হয় যে, বিহারের শাসনক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে বিজেপি। রাজ্যের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে দিল্লি থেকেই।
যদিও বিজেপি শিবির থেকেও বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। বিহারের বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে দলের মন্ত্রীদের পাত্তা দিচ্ছেন না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। ক্রমশ দুরত্ব বাড়তে শুরু করে। এর সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে ফাটল আরও সুদৃঢ় হয় আরসিপি সিংকে রাজ্যসভার টিকিট দেওয়াকে কেন্দ্র করে। একসময় তিনি নীতীশের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত ছিলেন। তবে, এবার রাজ্যসভার টিকিট দেয়নি জেডিইউ, আরসিপি সিং-এর বিজেপি ঘনিষ্ঠতার জন্যই নাকি তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। এদিকে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। এই পরিস্থিতিতে আরসিপি জেডিইউ ছেড়ে নীতীশের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে শুরু করেন। আর এতে বিজেপির মদত রয়েছে বলেই মত জেডিইউ-র। জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশের অভিযোগ, ‘২০১৩ সাল থেকে দলকে শেষ করার ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি। তাই শেষ অবধি জোট ভাঙার সিদ্ধান্ত নিলাম।’
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের নির্বাচনে কম ভোট এসেছিল জেডিইউ-র ঘরে। তবে জেডিইউ ও বিজেপি জোট সেই সময় অক্ষুণ্ণ রাখতে মরিয়া ছিল গেরুয়া শিবির। সেই কারণে নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছিল বিজেপি । তবে, এবার আর শেষ রক্ষা হল না। ভাঙল জেডিই-বিজেপি জোট।