বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির জোটবদ্ধ হয়ে দু’দিনের ভারত বনধের ডাক দিয়েছে। আজ তার দ্বিতীয় দিন। আজও দেশব্যাপী এই বনধ হবে। কেন্দ্রের বিজেপিশাসিত বিজেপি সরকারের নীতির প্রতিবাদে দেশব্যাপী ধর্মঘট চলছে। আজও আশাঙ্কা করা হচ্ছে যে, ব্যাঙ্কিং, গণপরিবহণ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাতেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তবে, এও মনে করা হচ্ছে যে, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সরবরাহের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলিতে অবশ্য প্রথম দিনের মতো প্রভাব নাও পড়তে পারে।
কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমিক, কৃষক এবং জনবিরোধী নীতি প্রণয়নের অভিযোগ তুলে, উক্ত দু’দিনের ভারত বনধের ডাক দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। মোট ১২ দফা দাবি জানিয়ে, আজ ও আগামিকাল ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি।
ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ এবং ব্যাঙ্কিং আইন সংশোধনী বিল ২০২১-এর প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ব্যাঙ্কের শ্রমিক সংগঠনগুলি। চলতি মাসের ২৮ এবং ২৯ মার্চ এসবিআই, পিএনবি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির প্রায় ৯ লক্ষ কর্মী ধর্মঘটে যোগ দিয়েছে। এই ধর্মঘটে সামিল হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন, ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া এবং অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন। এ ব্যাপারে এসবিআই কর্তৃপক্ষকে তাঁরা জানিয়েওছে। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পরেচছে দেশের ব্যাঙ্কিং পরিষেবাতেও।
এদিকে, সরকারি অফিসের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও প্রায় ডজনখানেক ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা এই ধর্মঘটে প্রভাবিত হবে না বলেই আশা করা হচ্ছে। গতকাল থেকে ডাকা দু’দিনের এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ ফোরাম এই অবস্থায় জানাচ্ছে যে, সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ধর্মঘটের কারণে অন্তত আটটি রাজ্যে বনধের জোরালো প্রভাব পড়েছে।
হরিয়ানায় কার্যত সফল এই সাধারণ ধর্মঘট। গড়াল না তিন হাজার বাসের চাকা। পাশাপাশি শুনশান কেরালার রাস্তাঘাট। ফোরাম সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘তামিলনাড়ু, কেরালা, পুদুচেরি, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, আসাম, হরিয়ানা এবং ঝাড়খণ্ডে বনধ অনেকাংশে সফল।’ গোয়া, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, পাঞ্জাব, বিহার, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় এবং অরুণাচল প্রদেশের মতো রাজ্য জুড়ে অনেক শিল্প এলাকায় আন্দোলন হয়েছিল। আজও বিভিন্ন রাজ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বনধ
বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পরই এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। এদিকে, ধর্মঘটে যাতে বাংলায় সকল পরিষেবা স্বাভাবিক থাকে এবং জনজীবন সচল রাখতে পদক্ষে নিয়েছে রাজ্য সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, ধর্মঘটের দিন সরকারি অফিস, সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসে হাজিরা বাধ্যতামূলক। শনিবার নবান্নের পক্ষ থেকে নির্দেশিকা জারি করে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, সাধারণ ধর্মঘটের দু’দিন অফিসে হাজিরা বাধ্যতামূলক। অনুপস্থিত থাকলে, শো-কজ নোটিস দেওয়া হবে। শুধু নোটিস পাঠানোই নয়, জবাব না দিলে, শৃঙ্খলাভঙ্গের নিয়মে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার। অনুপস্থিতির সঠিক কারণ দেখাতে না পারলে, মাইনেও কেটে নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, যৌথ ফোরামের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কর্মীদের সঞ্চয়ের উপরে কোপ বসাচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপিশাসিত সরকার। ইপিএফ-এ সুদের হাড় ৮.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮.১ শতাংশ করা হয়েছে। তার সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ, কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে মধ্যবিত্ত মানুষকে চাপে ফেলছে কেন্দ্র সরকার।
উল্লেখ্য, নবান্নের পক্ষ থেকে জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি থাকা, বাড়ির কোনও সদস্যের মৃত্যুর ক্ষেত্রে, আগে থেকে দীর্ঘ অসুস্থতার জেরে নেওয়া ছুটির ক্ষেত্রে, চাইল্ড কেয়ার লিভ, মেটারনিটি লিভ ও বাকি অন্য যে কোনও ছুটি যা ২৫ মার্চের আগে থেকে নেওয়া রয়েছে, সেইসব ক্ষেত্রে বনধ সংক্রান্ত নবান্নের নির্দেশিকা লাগু হবে না।
এদিকে, আজ বাংলাতেও বিভিন্ন জায়গায় বনধ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দমদম মেট্রো স্টেশনের সামনে সিটুর কর্মী- সমর্থকেরা জমায়েত করেছে। ব্যাঙ্ক কর্মচারিদের একাংশও সামিল হয়েছে আজও বনধে। এদিকে, যাদবপুরে রেল অবরোধে নেমেছে বাম সংগঠন।