বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ কয়লাকাণ্ডের তদন্তে সহযোগিতা করতে দিল্লিতে ইডি’র সদর দফতরে পৌঁছালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজই তাঁর হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। গতকালই তিনি দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন। আজ সকাল ১১ টার কিছু সময় আগেই তিনি ইডি’র দফতরে হাজির হন। এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতির কারণে দিল্লিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দফতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, এনিয়ে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ দ্বিতীয়বার দিল্লিতে ইডি’র দফতরে হাজিরা দিলেন।
এদিন ইডি’র দফতরে যাওয়ার আগে সুপ্রিম কোর্টে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দিনের শুরুতেই দিল্লিতে ইডি’র তলবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা। কিন্তু তাঁদের সেই আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে করা আবেদনে তৃণমূল সাংসদ জানিয়েছিলেন যে, তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লিতে নয়, কলকাতায় ইডি’র দফতরে ডাকা হোক তাঁদের। আগেই এই একই আবেদন জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তা খারিজ হওয়ার পরই ফের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোটিস পাঠায় ইডি। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই এদিন একই আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। কিন্তু এদিন সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন গ্রহণ করেনি। আবেদন গ্রহণ না করার কারণ হিসেবে, সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের হাতে অনেক মামলা থাকায়, তারা অভিষেকের মামলাটি গ্রহণ করতে পারছে না।
এরপরই তিনি সোজা চলে আসেন ইডি’র দফতরে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করায় ইডি’র দফতরে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে পারেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর, ইডি’র দফতরে পৌঁছানোর কিছু সময়ের মধ্যেই শুরু হয় জেরা। সূত্রের খবর, ইডি’র দফতরের তিন তলার একটি ঘরে তৃণমূল সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা চলছে। ইডি সূত্রে খবর, কয়লাকাণ্ডে বেশ কিছু নতুন তথ্য প্রমাণ তাঁদের হাতে এসেছে। দুটি বিদেশি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টে নজর রয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। সে ব্যাপারে অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারেও বলেও সূত্রের খবর। শুধু অভিষেকই নন, রুজিরাকেও তলব করা হয়েছে। ইডি’র তলবে সাড়া দিয়েই রবিবারই সস্ত্রীক দিল্লিতে যান অভিষেক।
রবিবার দিল্লি রওনা হওয়ার আগেই কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বললেন, ‘বাংলায় হেরে বদলা নিচ্ছে বিজেপি। সুপ্রিম কোর্টে যাব।’ প্রসঙ্গে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ রবিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি অগাস্ট মাসে হাইকোর্টে আপিল করেছিলাম। নভেম্বর পর্যন্ত চার মাস শুনানি হয়েছে। এরপর তিন মাস রায় স্থগিত করে রাখা হয়। এরপর ১০ মার্চ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল ঘোষণা হয়। চার রাজ্যে জেতে বিজেপি। এরপরের দিন ১১ তারিখ হঠাৎ করে রায় দেওয়া হয় আমার আবেদন খারিজ। যদিও আমি সুপ্রিম কোর্টে যাব। উচ্চ আদালতে যাওয়ার রাস্তা আমার খোলা রয়েছে এবং সর্বোচ্চ বিচার ব্যবস্থার উপর আমরা আস্থাশীল।’ কিন্তু এদিন অভিষেকের আবেদন সুপ্রিম কোর্টও খারিজ করে দিল।
উল্লেখ্য, মাত্র কয়েকদিন আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসক তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ইডির তলবের কারণে রবিবার তিনি দিল্লি রওনা হন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক বিশ্রাম নিতে বললেও আমি যাচ্ছি আজ।’ পাশাপাশি বিজেপিকে কটাক্ষ করে তাঁর বক্তব্য, ‘বাংলায় হেরে গায়ে জ্বালা ধরেছে বিজেপির। তাই বারবার ডেকে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু আমি মাথা নত করব না। আত্মসমর্পন করব না। লড়াই চলবে।’ পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইডি, সিবিআই-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েও ফের প্রশ্ন। তাঁর অভিযোগ, ‘যাঁদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে সুদীপ্ত সেন প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। আজ তাঁরা বিজেপির বড় নেতা। কেউ অসমের মুখ্যমন্ত্রী, কেউ এখানকার বিরোধী দলনেতা। তাঁদের সিবিআই, ইডি ডাকে না। তখন ইডি, সিবিআই-এর চোখে ছানি।’