বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ আজ স্বাধীনতার ৭৫ বছর। দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালিত হচ্ছে মহাসাড়ম্বরে। আজ সকাল সকাল দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন সকালে টুইট করে তিনি লিখেছেন, ‘সকলকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা। জয় হিন্দ।’ এদিন এরপর রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। তারপরে সেখান থেকেই সোজা চলে যান লালকেল্লায়।
এদিন সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ অন্যান্য মন্ত্রীরা, স্পিকার অম বিড়লা, সাংসদ এবং দেশ-বিদেশের অতিথিরা। এদিন সেখানে প্রথমে দেশের তিন সেনার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হয়। এরপর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এদিন ভাষণে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ তম বর্ষপূর্তিতে দুর্নীতি দমন নিয়ে কঠোর বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি করে রক্ষা পেয়ে যাবেন, এই ধারণা ভুল। দুর্নীতি করলে কেউ বাঁচতে পারবেন না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও লড়াই করতে হবে। দুর্নীতিকে ঘৃণা করলে, তবেই দুর্নীতি রোখা সম্ভব। দেশ থেকে যত টাকা লুঠ হয়েছে, তা ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্তদের করুণা দেখালে চলবে না, তাদের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাতে হবে।’
লালকেল্লা থেকে এদিন ফের একবার পরিবারতন্ত্রকে কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘ভাই-ভাতিজাতন্ত্র দেশের ক্ষতি করছে। দুর্নীতিকে ঘৃণা করলে তবেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘আপনাদের উন্নয়নের জন্য এই পরিবারবাদ এবং ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে লড়তে চাই।’
তিনই আরও বলেন, ‘ভ্রষ্টাচার। পরিবারবাদ। ভারতের মতো দেশ, যেখানে দারিদ্রের সঙ্গে লড়ছেন। একদিকে মানুষ থাকার জায়গা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে সেই লোক যাঁদের চুরির মাল রাখার জায়গা নেই। কেউ কেউ ব্যাঙ্ক লুট করে পালিয়েছে। আমরা তাঁদের সম্পদ ফিরিয়ে আমার চেষ্টা করছি। ভ্রষ্টাচার করলে কেউ বাঁচতে পারবে না। ভ্রষ্টাচার দেশকে শেষ করছে। আমি এর বিরুদ্ধে লড়ব। আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। আপনাদের সাহায্য পেলে আমি এর মোকাবিলা করতে পারব। কেউ কেউ এতটাই নির্লজ্জ হয়ে যান, দোষ প্রমাণিত হলেও তাঁদের নাম জপ করে। ভ্রষ্টাচারিকে সামাজিক ভাবে বয়কট করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে দেশে ভালো প্লেয়াররা ছিলেন না, তেমনটা নয়। কিন্তু পরিবারবাদের ভিত্তিতে নির্বাচন হত। এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সারা বিশ্বে ভারতের ঝান্ডা উড়ছে। ১৩০ কোটির টিম ইন্ডিয়া একসঙ্গে এগবে। সকলের স্বপ্নপূরণ হবে।’
এদিন লালকেল্লায় ভাষণে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “আগামী ২৫ বছর আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০৪৭ স্বাধীনতার শতবর্ষে বলিদানকারীদের স্বপ্নপূরণ করতে হবে। আমাদের ‘পঞ্চপণ’ নিতে হবে। প্রথম পণ, বিকশিত ভারত। দ্বিতীয় পণ, গুলামি থেকে মুক্তি। তৃতীয় পণ, উত্তরাধিকারের প্রতি গর্ববোধ। চতুর্থ পণ, প্রাণশক্তি ও একতা। পঞ্চম পণ, নাগরিক কর্তব্য পালন।”
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘ভারতের রোজগারের ক্ষেত্র ক্রমশ খুলে যাচ্ছে। যুব সমাজের জন্য নয়া ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আমরা বেসরকারি ক্ষেত্রকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। সেখানেও কাজের সুযোগ তৈরি হবে। ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে ক্রমশ উন্নত হচ্ছে ভারত। ’
দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নয়া স্লোগান দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এবং অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্লোগান মিশিয়ে তৈরি করলেন, ‘জয় জওয়ান, জয় কিষান, জয় বিজ্ঞান, জয় অনুসন্ধান’। জোর দিলেন প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর উপরে। প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বলেন, “ আত্মনির্ভর ভারত আমাদের শপথ। এই দিকেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের স্বদেশিকতায় গর্ব করতে হবে।”
এদিন প্রধানমন্ত্রী নারী শক্তি এবং নারী সম্মানের উপরে বিশেষ জোড় দেন। তিনি বলেন, ‘কোনও না কোনও কারণে আমাদের মধ্যে বিকৃতি এসেছে। আমরা নারীকের অপমান করছি। কিন্তু আমাদের নারীকে অপমান না করার প্রতিজ্ঞা নিতে হবে। নারীর গৌরব বাড়লে তবেই দেশ এগিয়ে যাবে।’ এর পাশাপাশি মোদীর ভাষণে উঠে এল সিধো-কানহু, বীরসা মুণ্ডাদের কথা। বললেন. ‘স্বাধীনতার লড়াইয়ে আদিবাসী সমাজের অবদান ভোলা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েক দশক পর ১৩০ কোটি দেশবাসী স্থির সরকারে শক্তি দেখেছে। রাজনৈতিক স্থিরতার গুরুত্ব বুঝেছে। অনেক বাধা সত্ত্বেও দেশ এগিয়ে চলেছে। যেখানে গণতন্ত্র সেখানে শান্তি রয়েছে। খাদ্য সংকট এসেছে, সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে। সমস্ত সংকট- বাধার মধ্যেও দেশ এগিয়ে চলেছে।’ তিবি আরও বলেন, ‘এই ৭৫ বছর সুখ-দুঃখ সঙ্গে করে নিয়ে আমরা চলেছি। দেশের মানুষ আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি দেশের প্রত্যেক মানুষের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করছি। মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য, এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের জন্য মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সাভারকরের নাম নেন। বলেন, ‘আত্মবলিদানকারী প্রত্যেকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এখন আত্মবলিদানকারীদের স্বপ্নপূরণের সময়। অনেক সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা এসেছে। ভারত গণতন্ত্রের জননী। মহাত্মা গান্ধী থেকে নেতাজি, সাভারকর, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিবেকানন্দ সকলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’