বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ আজ থেকে শুরু হচ্ছে ভারত জোড়ো যাত্রা। বুধবার থেকে রাহুল গান্ধী কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত এই যাত্রা শুরু করছেন। এদিকে, কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, টানা ৫ মাস ধরে ৩৫০০ কিলোমিটারের বেশি এই পদযাত্রা আসলে রাহুল গান্ধীর ‘পার্ট টাইম’ ভাবমূর্তি মুছে ফেলা। আসলে তাঁকে ‘পার্ট টাইম’ রাজনীতিক বলে কতাক্ষ করে থাকেন বিজেপি নেতারা। এমনকি কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ এবং দল ছেড়ে দেওয়া নেতারাও একি অভিযোগ তোলেন তাঁর বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, এই ৩৫০০ কিলোমিটার রাস্তার সম্পূর্ণটা না হলেও বেশিরভাগটাই হাঁটবেন তিনি। তবে, এই যাত্রা নিয়ে রাহুল্কে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
রাহুল গান্ধীর ঘোষণা অনুযায়ী, এই যাত্রার উদ্দেশ্য হল বিজেপি ও আরএসএসের বিভাজনের নীতির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ এবং ঐক্যের মতাদর্শকে তুলে ধরা। তবে, তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে এই যাত্রা শুরু হলেও, বেশিরভাগ বিজেপিশাসিত রাজ্যের মধ্যে দিয়ে এই যাত্রা যাবে না। যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের শাহের রাজ্য গুজরাতে এই যাত্রা যাবে না। আবার উত্তরপ্রদেশের যোগী রাজ্যে এই যাত্রা সামান্য ছুঁয়ে যাবে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে, কর্ণাটক হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্র এই চার বিজেপি বা বিজেপি জোট শাসিত রাজ্যে রাহুল গান্ধীর এই ভারত জোড়ো যাত্রা পৌঁছাবে। তবে, এই যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এই যাত্রার কারণে কি দেশব্যাপী নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি বিরোধী হাওয়া উঠবে? এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের দাবি, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনবে, কংগ্রেসের জন্যও সঞ্জীবনী হয়ে উঠবে।’
এদিকে, এই যাত্রা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতা তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি বলেন, ‘ভারত সংযুক্ত ও ঐক্যবদ্ধই রয়েছে। রাহুল গান্ধীর উচিত পাকিস্তানে এই কর্মসূচি চালানো।’ এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থার প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ‘১৯৪৭ সালে কংগ্রেসের আমলেই ভারত ভাগ করা হয়েছিল। যদি আপনারা (কংগ্রেস) ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করতে চান, তবে রাহুল গান্ধীর উচিত পাকিস্তানেই এই পদযাত্রা করা। ভারতে এই পদযাত্রা করে লাভ কী? ভারত সংযুক্ত ও ঐক্যবদ্ধই রয়েছে। আমি রাহুল গান্ধীকে পরামর্শ দিতে চাই যে, উনি যেন ভারত জোড়ো যাত্রা পাকিস্তানে করেন।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই কংগ্রেসের তরফে ভারত জোড়ো যাত্রার টাইটেল সং এবং ট্যাগলাইন প্রকাশ করা হয়। রাহুল গান্ধী কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর অবধি যে যে রাজ্যে যাবেন, সেই সেই রাজ্যের স্থানীয় ভাষাতেই এই গান প্রকাশ করা হবে। এদিকে, দলের সাংসদ জয়রাম রমেশ জানান, গোটা এই গোটা ভারত জোড়ো পদযাত্রার লাইভস্ট্রিম করা হবে। এরজন্য আবার আলাদাভাবে একটি ওয়েবসাইটও খোলা হয়েছে- bharatjodoyatra.in নামে।
অন্যদিকে, আজই কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, ‘আমরা এক এক ইতিবাচক রাজনীতির সূচনা করছি। আমরা আপনাদের কথা শুনতে চাই। আপনাদের সমস্যার সমাধান করতে চাই। আমাদের প্রিয় দেশকে জুড়তে চাই।’
এদিন এই যাত্রার আগে প্রয়াত রাজীব গান্ধীর স্মৃতিস্থল শ্রীপেরুম্বুদুরে প্রার্থনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন রাহুল গান্ধী। উল্লেখ্য, এখানেই এলটিটিই-র হামলায় নিহত দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাহুল গান্ধী। এর পরে কন্যাকুমারীতে বিবেকানন্দ মেমোরিয়াল, কামরাজ, থিরুভাল্লুভার মেমোরিয়াল হয়ে ফের মহাত্মা গান্ধী মণ্ডপে প্রার্থনা সেরে বিকেলে পদযাত্রা শুরু হবে বলেই জানা গিয়েছে। তবে, তারও আগে তামিলনাড়ুর প্রধানমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের হাতে জাতিয় পতাকা তুলে দেবেন রাহুল গান্ধী। হাত শিবিরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাহুলের যাত্রা তামিলনাড়ু, কেরল, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব হয়ে জম্মুতে পৌঁছবে। এই যাত্রায় গুজরাতকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, সব থেকে সহজ রাস্তা বেছে নেওয়ার জন্যই গুজরাতকে বাদ দিতে হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ১৫০ দিন বাদে জম্মু-কাশ্মীরে সেই পদযাত্রা শেষ হবে। মোট ১২টি রাজ্য ও ২টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে এই পদযাত্রা যাবে। শুধু কংগ্রেস কর্মীরাই নন, সাধারণ মানুষও এই পদযাত্রায় অংশ নিতে পারেন। তার জন্যে অনলাইনেও তাঁরা নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন বলেই জানা গিয়েছে।