সালটা ১৯১৮, সে সময় স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল থেকে সামান্য দূরত্বে গড়ে উঠেছিল একটি তেলেভাজার দোকান। দোকানী লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ কলকাতার মানুষের সাধ্য মেটাতে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ীই তেলেভাজা বানাতেন তখন। পিঁয়াজী, আলু বড়া, ফুলুরি আর বেগুনির পসরা সাজিয়ে দোকানে বসতেন তিনি। আশেপাশের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ইতিমধ্যেই।
তখনও সবার কাছে `নেতাজি` নামে পরিচিত হয়ে ওঠেননি সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি তখন তরুণ এক কলেজ ছাত্র। প্রায় প্রতিদিনই কলেজ ছুটির পরে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে করে তেলেভাজা খেতে আসতেন নেতাজি। খাওয়ার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে চলত আড্ডাও। দোকানী লক্ষ্মীনারায়ণও যোগদান করতেন তাতে। পিঁয়াজি খেতে খুবই ভালোবাসতেন সুভাষচন্দ্র এবং তাঁর বন্ধুগুলি। তাই বেশিরভাগ দিনই দোকানটিতে পিঁয়াজির আয়োজন করাই থাকত তাঁদের জন্য।
সেরকমই এক ২৩শে জানুয়ারির বিকেল। সেদিন সুভাষের জন্মদিন। বন্ধুরা দাবী করলেন, জন্মদিন উপলক্ষে তেলেভাজা খাওয়াতে হবেই সুভাষকেই। হাসি মুখে রাজি হলেন সুভাষচন্দ্রও। তবে দোকানে যাওয়ার পর ঘটল অন্য ঘটনা। সুভাষের জন্মদিন জানতে পেরে লক্ষ্মীনারায়ণবাবু জানালেন, সেদিনের খাওয়ার সমস্ত দায় তিনি নিজেই নেবেন। প্রাণভরে সুভাষ এবং তাঁর সব বন্ধুদের তেলেভাজা খাওয়াবেন তিনি। যেমন বলা, তেমনই কাজ! সেদিন সবাইকে ইচ্ছেমতো পিঁয়াজী ,আলুর চপ আর ফুলুরি খাইয়েছিলেন তিনি।
এরপর কেটে গিয়েছে প্রায় তিরিশ বছর। স্বাধীন হয়েছে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ। সেদিনের সেই কলেজছাত্রটি তখন সব্বার প্রিয় `নেতাজি`। তবে লক্ষ্মীবাবু কিন্তু তখনও ভোলেননি তিরিশ বছর আগের কথা। নেতাজির প্রতি অশেষ সম্মানে তাঁর সেই স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইলেন তিনি। ১৯৪৮ সালের ২৩ জানুয়ারি সকাল থেকে তিনি শুরু করলেন ফ্রিতে তেলেভাজা বিতরণ। ওইদিন একদম বিনামূল্যে তেলেভাজার স্বাদ গ্রহণ করলেন কয়েকশো জনসাধারণ। তারপর থেকে প্রত্যেক বছরই চলে আসছে এই প্রথা। নেতাজির জন্মদিনের দিন ফি বছর বিনামূল্যে তেলেভাজা খেতে পারেন মানুষ। বর্তমানে লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ জীবিত না থাকলেও তাঁর বংশধরদের হাত ধরেই এগিয়ে চলেছে সে প্রথা৷ পূর্বপুরুষের এই ঐতিহ্য আগামীতেও বহন করে নিয়ে যেতে সদা আগ্রহী তাঁরা।