১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হয় আমাদের দেশ, ভারত। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর কঠিন লড়াইয়ের ঘাম-রক্তের বিনিময়েই মিলেছে এই স্বাধীনতা। আর দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এমন অনেক কাহিনী রয়েছে যা আজও আমাদের অনেকেরই অজানা। তবে ইতিহাসে পাতায় তা আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আজ জেনে নেওয়া যাক তেমনই দু`টি কাহিনী যার নেপথ্যে রয়েছে বীরভূমের দুবরাজপুর।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে দু`টি উল্লেখযোগ্য দিন ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর। এই দিন দু`টিতেই পরাধীন ভারতে দেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল বীরভূমের দুবরাজপুর আদালতে। সেকালে বীরভূমের দুবরাজপুর আদালত ছিল মুন্সেফ কোর্ট। দেওঘর থেকে কাটিহার পর্যন্ত এর এলাকা। আর এই আদালতের সঙ্গেই জড়িয়ে দুই অজানা কাহিনী যা হয়তো অনেকেই জানেন না।
বীরভূমে স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ে এই দুবরাজপুর আদালতেই প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলিত। যদিও এই পতাকা উত্তোলনের দিনক্ষণ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, এই দুবরাজপুর মুন্সেফ কোর্টের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অগাস্ট। ওই দিন সৌরেন্দ্র নারায়ণ সেন এবং শ্রীপতি পাতর-এর নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ জন মিছিল করে আসেন এবং মুন্সেফ কোর্ট ও ডাকঘরে উপস্থিত হয়ে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। আবার প্রচলিত কাহিনী থেকে জানা যায়, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর দুবরাজপুর মুন্সেফ কোর্টে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল। তবে এই দুটি দিনই স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে দুবরাজপুরে আলাদা ইতিহাস তৈরি করেছিল।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টা নাগাদ প্রায় ৫০০ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী একটি মিছিল করে দুবরাজপুর থানার সামনে আসেন এবং বন্দেমাতরম সহ নানা স্লোগান দেন। এরপরেই তারা উপস্থিত হন দুবরাজপুরের মুন্সেফ কোর্ট প্রাঙ্গণে। সেখানে তারা অবস্থিত ডাকঘর ভাঙচুর করেন। এরপর ১টা নাগাদ মুন্সেফ কোর্ট আক্রমণ করেন তারা। আক্রমণের আশঙ্কায় দরজা-জানলা বন্ধ করে সবাই ভিতরে ছিলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ভিতরে প্রবেশ করেন এবং সেরাস্তায় আগুন লাগিয়ে দেন। কাগজপত্র, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, পাশের পুকুরে ফেলে দেন।
এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য প্রায় ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। এদের মধ্যে প্রায় ২৫ জন শাস্তি পেয়েছিলেন। পরপর এই দুটি ঘটনায় নাম জড়িয়ে রয়েছে আর এক স্বাধীনতা সংগ্রামী হারান খাঙ্গারের। যার নাম এখনো স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে আন্দামান সেলুলার জেলে। এছাড়াও স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে দুবরাজপুরে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায়, পতিত চ্যাটার্জী শম্ভুনাথ কবিরাজ প্রমুখরা। পরপর দুটি ঘটনা কাঁপিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে। যা বীরভূম জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে বিবেচিত হয়।