আজ ৫ সেপ্টেম্বর। দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে শিক্ষক দিবস। এই দিনটি আসলে প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন। আর এই বিশেষ দিনেই শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে জানানো হয় সম্মান এবং শ্রদ্ধা। স্কুল, কলেজ বা টিউশনে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি নিজেদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে পড়ুয়ারা। তবে এই বিশেষ দিনটির ইতিহাস এবং গুরুত্ব জানেন কি? জানেন কেন ৫ সেপ্টেম্বরই পালিত হয় এই শিক্ষক দিবস? জেনে নিন তা!
ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা দার্শনিক ভারতরত্ন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ১৮৮৮ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হন। তিনি ছিলেন একাধারে অত্যন্ত দক্ষ শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং দার্শনিক। পাশাপাশি একজন নিষ্ঠাবান এবং স্নেহপরায়ন শিক্ষকও বটে! তিনি যেমন ছাত্র-ছাত্রীদের স্নেহ-ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখতেন। তেমনই পড়ুয়ারাও তাঁকে যথেষ্ট সম্মান জানাতেন।
বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্র, ছাত্রীদের বক্তৃতা দিয়ে তাদের উজ্জীবিত করেছেন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেমন ডাক পেয়েছেন তেমনই পড়িয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও। ছাত্র-ছাত্রীরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর পড়া শুনত। দেশের বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি নিয়ে তিনি ইউনেস্কো গিয়েছিলেন। তাঁর এই বিপুল জ্ঞানের কারণে ইউনেস্কোর এক্সিকিউটিভ বোর্ডের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন তিনি।
রাধাকৃষ্ণণ রাষ্ট্রপতি হয়ে ওঠার পর তাঁর ছাত্ররা তাঁর কাছে বছরের কোনও একটি দিনকে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করার আর্জি জানায়। বছরের একটি দিন শিক্ষকদের সম্মান দেওয়ার জন্য যেন ধার্য করা হয়। তখন তিনি ৫ সেপ্টেম্বর দিনটিকেই বেছে নেন। জানান, তাঁর জন্মদিন হিসেবে না পালন করে এই দিনটি যেন শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। সেই থেকে শুরু হল দেশ জুড়ে এই দিনটিতে জাতীয় শিক্ষক দিবস পালন করা।
আসলে শিক্ষকরাই হচ্ছেন সেই মানুষ, যাঁরা আমাদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে তোলেন। সমগ্র বিশ্বজগতের সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচিতি ঘটে শিক্ষকের হাত ধরেই৷ তবে শিক্ষকরা যে কেবলমাত্র ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান আরোহনে সাহায্য করেন তা-ই নয়, তাঁরা জীবনে পথ দেখান, এগিয়ে চলতে সাহায্য করেন। পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক গঠনের ক্ষেত্রেও শিক্ষকের বিপুল দায়িত্ব থাকে।
ভারতে সেই বৈদিক যুগ থেকেই গুরু-শিষ্য প্রথা চলে আসছে। গুরু অর্থাৎ শিক্ষকরা শিক্ষা দেন, আর শিষ্য অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীরা সেই জ্ঞান অর্জন করে জীবনের পথে এগিয়ে চলে। মানুষের মতো মানুষ গড়ে ওঠার পিছনে শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। তাই শিক্ষকরা সমাজের সম্পদ। আর ৫ সেপ্টেম্বরের এই বিশেষ দিনে শিক্ষকদের এই অবদানের জন্য বিশ্ব জুড়ে তাঁদের সম্মান জানানো হয়। প্রতি বছরই এই দিনটির একটি থিম থাকে। এ বছরের থিম হল - টিচার্স: লিডিং ইন ক্রাইসিস, রিইমেজিং দ্য ফিউচার।