প্রতি পনেরো মিনিট অন্তর এক বার করে বাজে সেই ঘণ্টা। আর প্রতি ঘণ্টায় বাজে একটু জোরে শব্দ করেই। সেই ১৮৪১ সাল থেকে এই ঘণ্টা বেজে চলেছে এক ভাবে। সারানোর দরকার হয়নি এমন অবশ্য নয়। লন্ডন শহরে গিয়ে বিগ বেন দেখার সৌভাগ্য ক’জনের আর হয়! যাঁদের হয় না, তাঁরা আসতে পারেন এই ইমামবাড়ায়। ব্রিটিশ স্থাপত্যের বদলে পাবেন ইসলামি শিল্পকলার স্বাদ।
প্রসঙ্গত, পুরোনো স্থাপত্যটা আগেই ছিল। নতুন এই স্থাপত্যটির প্রধান স্থপতি ছিলেন সৈয়দ কেরামত আলি। তিনি ছিলেন গণিতজ্ঞ। এই ইমামবাড়ার নকশা তিনিই করেছিলেন। হাজি মহম্মদ মহসিন, যাঁকে হুগলি কেন, অনেক দূর-দূরান্তের মানুষও দানবীর বলেই জানেন। মহসিনের মৃত্যুর সময়েই জীর্ণ হয়ে পড়েছিল এই ইমামবাড়া। মহসিন এস্টেটের দায়িত্ব সৈয়দ কেরামত আলি পাওয়ার পরে তিনি নতুন করে ওই ভগ্নপ্রায় ইমামবাড়া তৈরির পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নজরগাহ হুসেন ও তাজিয়াঘর মিলিয়ে এই বিশাল সৌধ তৈরি করেন। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল ২০ বছর। খরচ হয়েছিল পৌনে ৩ লক্ষ টাকা।
এই পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলাতেই রয়েছে লন্ডনের বিগ বেনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘড়িটি। ঘড়িটির নির্মাতা মেসার্স ব্ল্যাক অ্যান্ড হারি কোম্পানি, বিগ বেন, লন্ডন। সেই সময়ে ঘড়িটির দাম পড়েছিল ১১,৭২১ টাকা। এই ঘড়িটিতে দম দেওয়ার জন্য যে চাবি আছে, তার ওজন ২০ কিলোগ্রাম, দু’জন মিলে ঘড়িটি দম দিতে হয়। তিনটি ঘণ্টা রয়েছে, মাঝারি ও ছোট ঘণ্টা দুটি ১৫ মিনিট অন্তর বাজে আর বড় ঘণ্টাটি বাজে ১ ঘণ্টা অন্তর। ঘণ্টাটিতে রানি ভিক্টোরিয়ার মুখ খোদাই করা আছে। ঘড়ির দু-দিকের দুই মিনারে ওঠা যায় ১৫২টি করে সংকীর্ণ সিঁড়ি বেয়ে। ঘড়ির ডায়ালে লেখা রয়েছে আরবি হরফ।
এছাড়াও ইমামবাড়ার অঙ্গনে রয়েছে একটি সূর্যঘড়িও। মূল ঘড়িতে পিতলের ফলক ছিল, তবে সেটি চুরি গেছে। পরে পাথরের ফলক লাগানো হলেও তাতে মিনিট পনেরো সময়ের পার্থক্য হয়। ২২ বিঘা জমি জুড়ে গঙ্গার দক্ষিণ পারে নির্মিত হুগলির ইমামবাড়া বিপুল ইতিহাসের সাক্ষ্য বয়ে নিয়ে চলেছে। আজও অবশ্য মহরমের উৎসব হয় এখানে। বর্ণাঢ্য মিছিল বেরোয়। ভালোই হয় ভক্ত সমাগম হয়।তবে সেই ঔজ্জল্য আর নেই। কালের নিয়মে ভগ্নপ্রায় হয়ে গেছে।খ খসেছে পলেস্তারা। ভেঙেছে বিভিন্ন অংশ। ২০০৮ সালে হেরিটেজ ঘোষণা হয় হুগলির ইমামবাড়াকে। এই স্থাপত্যকে রক্ষা করার জন্য রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ইমামবাড়া রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করে দিয়েছে। প্রায় দু`কোটি টাকা খরচও হয়। এখনও পর্যন্ত বিশাল ইমামবাড়ার অনেক অংশ সংস্কার করা হয়নি। তবুও ইমামবাড়া দেখতে আসার জন্য পর্যটকরা আজও তীব্র আকর্ষণ অনুভব করেন।