সোনাক্ষী সিনহা এবং রণবীর সিং অভিনীত ‘লুটেরা’ সিনেমায় দেখানো রাজবাড়ীটির কথা মনে আছে? সিনেমায় দেখানো এই প্রাসাদটিকে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার বিপুল ইতিহাস। `খোকা ঘুমলো পাড়া জুড়লো, বর্গী এল দেশে’-এই প্রবাদ বাক্যটি জানেন নিশ্চয়ই! জানা যায় একদা বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁর রাজত্বকালে দুর্ধর্ষ মারাঠা বর্গিরা বাংলায় ব্যাপকভাবে লুঠপাট চালিয়েছিল। এই অত্যাচারের ঘটনা আমরা ইতিহাস থেকে জানি। বর্গীর দল সেইসময় বাংলায় চৌথ আদায়ের জন্য তখন বার বার হানা দিত!
বাংলার মানচিত্র থেকে নবাব শেষপর্যন্ত বর্গিদের থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছিলেন তা আমরা জানি! তবে এমন ভাবার কারণ নেই যে মারাঠা বর্গিদের সবাই বাংলা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। বর্গি সেনাবাহিনীর কেউ কেউ অনেক ধনসম্পত্তির মালিক হয়ে থেকে যায় বাংলাতেই। বাংলাতে থাকার দরুন তাঁরা আস্তে আস্তে বাঙালি সংস্কৃতিকে আপন করে নিতে থাকেন। হুগলি জেলার ইটাচুনার রাজবাড়ী সেই বাংলা ছেড়ে না যাওয়া বর্গিদেরই তৈরী।
জানা যায়, বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁ আর বর্গিদের মধ্যে শান্তিস্থাপিত হলে রাধামাধব কুন্দ্রা বাংলাতেই থেকে যান। তিনি সীমান্ত পেরিয়ে চলে যাননি অন্য মারাঠাদের মতো। তিনি বাংলা লুঠের ধনসম্পত্তি এবং চাষবাস থেকে উপার্জিত থেকে অর্থ দিয়ে গড়ে তোলেন ইটাচুনা গ্রাম। আর সেখানেই তিনি গড়ে তোলেন এক স্থায়ী জমিদারি।
প্রসঙ্গত, বাংলায় থাকতে থাকতে মারাঠি কুন্দ্রা পরিবার হয়ে ওঠে সম্পূর্ণভাবে বাঙালি পরিবার। এমনকি মারাঠি ‘কুন্দ্রা’ পদবি বদলে হয়ে যায় ‘কুণ্ডু’ তে। এই পরিবারের জমিদার সাফল্যরাম কুণ্ডু প্রায় ২০ বিঘা জমির উপর ১৭৬৬ সালে তৈরি করেছিলেন এই বিশাল রাজবাড়ি। ইটাচুনার এই রাজপ্রাসাদকে এখনও আঞ্চলিক মানুষ ‘বর্গিডাঙা’ বলে ডাকে। কারণ শেষমেশ এই বাড়ি বর্গিদের তৈরি করা রাজবাড়ি বলে কথা!
উল্লেখ্য, এই প্রাসাদ ভ্রমণপিপাসুদের কাছে ভীষণই জনপ্রিয়। বর্তমানে ব্যক্তিমালিকানাতেই রয়েছে এই প্রাসাদ। রাজপরিবারের বর্তমান সদস্যরাই এখন এই বাড়িটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এখন এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে হোম স্টে’র দারুণ বন্দোবস্ত। একইসঙ্গে এখানে রয়েছে রাজকীয় খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। পর্যটনকেন্দ্র তো বটেই শুটিং স্পট হিসেবেও এই রাজবাড়ির বেশ নাম আছে। হিন্দি থেকে বাংলা বহু সিনেমারই শুটিং হয়েছে এখানে। আর তাই ইতিহাস আর আভিজাত্যের চাদরে মোড়া এই রাজবাড়ি অমোঘ আকর্ষণ ইতিহাস প্রেমীদের জন্য।