আজ বাংলার নতুন বছর! আজ নববর্ষের আনন্দে মেতে উঠবে বাঙালি! সকাল থেকেই দোকানে দোকানে হালখাতার ভিড়! চলুন তার আগে জেনে নেওয়া যাক হালখাতার হালহকিকত! জানেন কী এর সঙ্গে যুক্ত প্রাচীন ইতিহাস?
পয়লা বৈশাখ! বা নববর্ষ! বাঙালির বছর শুরুর দিন। উদযাপনের দিন। ১৪২৮ বঙ্গাব্দ শেষ হয়ে শুরু হয়ে গেছে ১৪২৯। আর আজ মহা ধুমধামে বিশ্বের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিরা বাংলা সংস্কৃতি উদযাপন করবেন! আর এই বিশেষ দিনে বিশেষ কিছু কাজ বাঙালি করেই থাকে। আর যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল `হালখাতা`!
আসলে `পয়লা বৈশাখ` বললেই সাধারণ বাঙালির মনে পরপর যে ছবি ভেসে ওঠে, তার মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হল `হালখাতা`। আপনি বাঙালি, অথচ `হালখাতা` সম্বন্ধে জানেন না, এমনটা খুঁজে পাওয়া ভার! কিন্তু, জানেন কি `হালখাতা`র সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে এক অতি প্রাচীন ইতিহাস? আপনি কী জানেন সেই ইতিহাস? না জানলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
সংস্কৃত এবং ফারসি এই দুই ভাষা থেকেই `হাল` শব্দটি এসেছে! আসলে সংস্কৃত শব্দ `হাল`-এর অর্থ হল `লাঙল`। আর, ফারসি `হাল`-এর অর্থ হল `নতুন`। আর বাঙালি `হালখাতা`র ক্ষেত্রে এই দুটি অর্থই গ্রহণযোগ্য। ইতিহাস অনুযায়ী, লাঙলের ব্যবহার শেখার পর মানুষ স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে। লাঙলের ব্যবহার শেখার পরই কৃষিজাত দ্রব্য বিনিময়ের প্রথাও শুরুও হয়। লাঙল দিয়ে চাষের ফলে উৎপন্ন দ্রব্য বিনিময়ের হিসেব যে বিশেষ খাতায় লিখে রাখা হত, সেই খাতারই নাম ছিল `হালখাতা`।
এখানেই শেষ নয়, `হালখাতা`র ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সম্রাট আকবরের নামও। উল্লেখ্য, বাংলা সনের অন্যতম প্রবর্তকও ছিলেন মোগল সম্রাট আকবরই। বাংলার প্রাচীন যুগের সঙ্গে হালখাতার দীর্ঘ সম্পর্ক! আগে এই হালখাতার অনুকরণেই জমিদারদের কাছ থেকে বকেয়া রাজস্ব আদায়ের জন্য `পুণ্যাহ` চালু করেছিলেন সম্রাট আকবর। আর এই একই নিয়ম মেনে বাংলার নবাব মুর্শীদকুলি খাঁ-ও `পুণ্যাহ` প্রচলন করেন। তবে নবাবি হাতে পড়ে হালখাতা`র নাম বদলে `পুণ্যাহ` হলেও কিন্তু পরবর্তী কালে সেই `হালখাতা` নামটিই সার্বজনীনভাবে প্রচলিত হয়ে পড়ে।
কবে থেকে শুরু হল পয়লা বৈশাখের? মনে করা হয় মোগল সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই বাঙালির নববর্ষ পয়লা বৈশাখের উদযাপন শুরু হয়। আর একই সঙ্গে শুরু হয় বাংলা বছরের প্রথম দিনে বিভিন্ন দোকানে আনুষ্ঠানিকভাবে হাল-নগদ করার প্রক্রিয়া। মনে করা হয়, মোগল আমল থেকেই পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান করা হত। চৈত্র মাসের শেষদিন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন প্রজারা আর পয়লা বৈশাখে জমিদাররা প্রজাদের মিষ্টিমুখ করিয়ে দিনটি উদযাপন করতেন।