শরতের আকাশে-বাতাসে এখন পুজোর রেশ৷ কিছুদিন পরেই মর্ত্যে আসবেন মা দুর্গা। তাঁকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু চারিদিকে৷ যদিও দেবী দুর্গার আসতে এখনও বেশ কয়েকটা দিন বাকি। তবে বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের বালিজুড়ি গ্রামের দুই পরিবার কিন্তু তার আগেই মেতে উঠবেন মাতৃ আরাধনায়। এই দুই পরিবার হল চট্টোপাধ্যায় এবং রায় পরিবারে। এখানে সময়ের আগেই উমা আসেন সপরিবারে। পুজোর তিথির আগেই এই দুই পরিবারে শুরু হয়ে যায় দেবী-বন্দনা।
বালিজুড়ি গ্রামের চট্টোপাধ্যায় ও রায় পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকশো বছরের প্রাচীন রীতি অনুসারে এই দুই পরিবারে পুজো শুরু হয় কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে। যা দুর্গা পুজোর মহানবমীর ঠিক একপক্ষ কাল আগে। পুজোর ১৫ দিন আগে এই দুই পরিবারে পুজো শুরু হওয়ার রীতি চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। সময়ের আগেই উমা আসেন এই দুই পরিবারে। সেই দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো।
অন্যান্য পুজোগুলির ক্ষেত্রে মহাসপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা স্নানের জন্য শোভাযাত্রা করা হয়। তবে চট্টোপাধ্যায় ও রায় পরিবারের ক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম। কৃষ্ণপক্ষের নবমীর শুভ তিথিতে রীতি মেনে, এই দুই পরিবার যমুনা সায়র পুষ্পরনী থেকে মঙ্গলঘট নিয়ে মা দুর্গার পুজো শুরু করে দেয়। জানা যাচ্ছে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই পুজো। যা শুরু করেছিলেন কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়, ১১১১ বঙ্গাব্দে।
চট্টোপাধ্যায় পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কাশীনাথ রাজনগরের নবাবের দেওয়ান ছিলেন। তৎকালীন বীরভূমের রাজধানী ছিল রাজনগর। রাজনগরের নবাব আলিনকি খান সুচারুভাবে দুর্গাপুজো চালানোর জন্য ৬৪ বিঘা জমি, ৭ টি পুকুর এবং একটি বড় পুস্করনী দান করেন। তারপর থেকেই রীতি মেনে কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে দুর্গা মায়ের বোধনের মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো।
অন্যদিকে, রায় পরিবারের পুজো সম্পর্কে জানা গিয়েছে, বালিজুড়ি গ্রামের সবথেকে প্রাচীন পুজো হল এই রায় পরিবারের পুজো। আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে এক কাপালিক এই পুজো আরম্ভ করেন। তারপর থেকেই রীতি মেনে, প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে পুজো হয়ে আসছে। রায় পরিবারের পুজো শুরু হয় কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে, যমুনা সায়র থেকে ঘটা করে দুর্গাপুজোর মঙ্গলঘট আনার পর। এরপর দেবী দুর্গার আরাধনায় মাতে পরিবার। রীতি মেনে বিজয়া দশমী পর্যন্ত চলে পুজো। তারপর চোখের জলে দেবীকে বিদায় জানানো হয়।