বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সাল ২০২১, তারিখ ২ সেপ্টেম্বর। থমকে গিয়েছিল সবকিছু। অসংখ্য অনুরাগী, প্রিয়জনদের চোখের জলে ভাসিয়ে, না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন অভিনেতা-মডেল সিদ্ধার্থ শুক্লা। জিম করা শরীর, পেশীবহুল দেহ, আপাতদৃষ্টিতে আপাদমস্তক ফিট মানুষটাই যে মাত্র ৪০ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হবেন, কেউ কল্পনাই করতে পারেননি। কিন্তু এমনটাই ঘটেছিল বাস্তবে। সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে চিরবিদায় নিয়েছিলেন তিনি। আজই সেই অভিশপ্ত দিন, দেখতে দেখতে সিদ্ধার্থ শুক্লার মৃত্যুর ১ বছর পূরণ হল। আজও তাঁর অনুপস্থিতি তাঁর আপনজন-প্রিয়জন এবং অনুরাগীদের যন্ত্রণা দেয়। তবে, আজও তিনি সকলের মনের মণিকোঠায় রয়ে গিয়েছেন একইভাবে।
বরাবরই সিদ্ধার্থ শুক্লা ছিলেন আপাতভাবে কঠিন অথচ তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলেন যে, তাঁর মন ছিল খুবই নরম। ভক্তদের সঙ্গে তাঁর ব্যবহারে সেই মনের পরিচয় মিলেছে বহুবার। গত বছর আজকের দিনেই সিদ্ধার্থ শুক্লার আকস্মিক প্রয়াণ ঘটে। তাঁর প্রয়াণের খবরে গোটা দেশ শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে। টেলিভিশনের সঙ্গে সঙ্গে বলিউডেও নেমে আসে শোকের ছায়া। পিছনে ফেলে যান মা এবং দুই বোনকে। তাঁর অভিনয়, তাঁর স্বভাব এবং ব্যবহার দিয়ে তিনি সকলের মন জয় করেছিলেন। সিদ্ধার্থ শুক্লার প্রথম প্রয়াণ বার্ষিকীতে রইল কিছু কথা তাঁর কেরিয়ার এবং ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে।
টেলিভিশনের পাশাপাশি বলিউডে ছবিতেও কাজ করেছেন সিদ্ধার্থ শুক্লা, তাঁকে দেখা গিয়েছে আলিয়া ভাট এবং বরুণ ধাওয়ানের সঙ্গে হাম্পটি শর্মা কি দুলহানিয়া চলচ্চিত্রে। এহেন সিদ্ধার্থের জাঁকজমকে ভরা জীবনের শুরুটা মোটেও এতোটা সহজ ছিল না। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে খুবই অর্থকষ্টের মধ্যে। ছেলেবেলায় অভিনেতার বাবা প্রয়াত হন। ছোট ছোট সন্তানদের মানুষ করতে মা সংসারের হাল ধরেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে সিদ্ধার্থ সবার ছোট ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন সবচেয়ে আদরের। সিদ্ধার্থ একবার বলেছিলেন, ‘আমরা ছিলাম তিন ভাইবোন। আমি ছিলাম সবচেয়ে ছোট। মাকে ছাড়া আমার একবিন্দুও চলত না। মনে আছে মা একহাতে রুটি বেলত আর এক হাতে আমায় শক্ত করে ধরে রাখত। হাত ছেড়ে দিলেই আমি কান্না জুড়ে দিতাম।’ এই সিদ্ধার্থই গত বছর আজকের দিনে সেই মায়ের হাত ছেড়ে চিরদিনের জন্য বিদায় নেন।
সিদ্ধার্থ কলেজ জীবন থেকেই মডেলিং করা শুরু করেন। তুরস্কতে হওয়া ওয়ার্ল্ডস বেস্ট মডেল খেতাব জিতেছিলেন দেশের হয়ে। ৪০ জন প্রতিযোগীকে হারিয়ে এই শিরোপা ছিনিয়ে নেন তিনি। এই খেতাব জেতার পরে আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক নামি ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে মডেলিং করে পরিচিত মুখ হয়ে উঠলেন সিদ্ধার্থ শুক্লা। পাশাপাশি বিনোদন জগতেও তাঁর সাফল্যের পথ চলার শুরু। ছোট পর্দায় সিদ্ধার্থের পথচলা শুরু হয় জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘বাবুল কা অঙ্গন ছুটে না’ সিরিয়ালের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু তাঁকে অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল ‘বালিকা বধূ’-র শিব চরিত্রটি। বলিউডেও কাজ করছিলেন। আলিয়া ভাট এবং বরুণ ধাওয়ানের সঙ্গে হাম্পটি শর্মা কি দুলহানিয়া চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা ডেবিউ হিসাবে পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
সিদ্ধার্থ শুক্লা একাধিক রিয়্যালিটি শো- তেও অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে, ফিয়ার ফ্যাক্টর, খতরো কে খিলাড়ি প্রভৃতি। আবার ভারতী সিং- এর সঙ্গে আরও এক জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ইন্ডিয়া গট ট্যালেন্ট- এ সঞ্চালনাও করেছিলেন। তবে, সিদ্ধার্থের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, বিগ বস ১৩। বিগ বসের ওই সিজনে সিদ্ধার্থই একমাত্র প্রতিযোগী ছিলেন, যিনি প্রকৃতভাবে খেলেন। খোদ এই শোয়ের সঞ্চালক সলমন খান বারবার সিদ্ধার্থের প্রশংসা করেছেন। এই সিজনেই সিদ্ধার্থের সঙ্গে আর এক প্রতিযোগী শেহনাজ গিলের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাঁদের মধ্যের মিষ্টি রসায়ন সকলের মন ছুঁয়ে যায়। ওই সিজনে বিগ বস জেতেন সিদ্ধার্থ। তাঁর কেরিয়ারের মাঝে রেশমি দেশাইয়ের সঙ্গেও ডেটিংয়ের গুজব ছড়িয়েছিল। ধারাবাহিক ‘দিল সে দিল তক’-এ একসঙ্গে কাজ করার সময়ই রেশমি এবং সিদ্ধার্থের মধ্যে সম্পর্কের শুরু হয় বলেই গুঞ্জন ওঠে। যদিও পরে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে শেহনাজ গিলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়।
গত বছর ২ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু সকলকেই হতবাক করে দিয়েছিল। পরিবারের পাশাপাশি গোটা দেশ এই খবরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সিদ্ধার্থের পরিবারের পাশাপাশি শেহনাজ গিলও ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন। বেশ কিছু সময় তিনি বিনোদন জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন। ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। পরে সিদ্ধার্থকে উৎসর্গ করে গানও গান। যা বেশ জনপ্রিয় হয়। আজ তাঁর ভক্ত এবং আপনজন দের মনে তাঁর সেই সদাহাস্য মুখ অমলিন রয়ে গিয়েছে। থাকবেও চিরকাল।